হিন্দু পারিবারিক আইন, বিবাহ-বিচ্ছেদ বা বহু-বিবাহ সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের সুপারিশ চূড়ান্ত হয়েছে। সরকার এগুলো নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হলেও ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’, ‘সংখ্যালঘু কমিশন’, বা ‘হেইট-ক্রাইম বিল’, অথবা হিন্দু ফাউন্ডেশন বা সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় নিয়ে কোন সাড়াশব্দ করছেন না!

হিন্দুরা তাই সন্দিহান, যেগুলো আগে দরকার তা না করে সরকার হিন্দু পারিবারিক আইন নিয়ে পড়লেন কেন? সরকারের মধ্যে কিছু লোকের কি খেয়েদেয়ে কাজ নেই?

স্বাধীনতার পর গত পঞ্চাশ বছরে কোন সরকার হিন্দুদের একটি দাবিও মেনে নেয়নি। না, নিয়েছে! শত্রু-সম্পত্তি আইন বাতিল হয়েছে। বাতিল হওয়ার আগে হিন্দুরা এই আইনে কমবেশি ত্রিশ লক্ষ একর সম্পত্তি হারিয়েছে। বাতিল হলেও এর সুফল কোন হিন্দু’র ঘরে আসেনি; সম্পত্তি ফেরত অথবা ক্ষতিপূরণ পাননি। শত্রু সম্পত্তি আইন বাতিল অনেকটা ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি’-র মত, চুক্তি আছে শান্তি নাই, তেমনি, শত্রু-সম্পত্তি আইন নাই, জমিও নাই, বিষয়টি অনেকটা ‘লোক-দেখানো’!

সরকার হিন্দু পারিবারিক আইনে হাত দিচ্ছেন, মুসলিম পারিবারিক আইনে হাত দিচ্ছেন না কেন? ধর্ম-নির্বিশেষে সমগ্র বাংলাদেশের জন্যে ‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’ চালু করলে তো ল্যাঠা চুকে যায়!

এক দেশ, এক আইন; এক ব্যক্তি, এক বিয়ে; দুই সন্তান, স্ত্রী-পুত্র-কন্যার সম্পত্তিতে সমান অধিকার- এসব তো ভালো কথা। সরকার শুধু হিন্দুদের ভালো চাচ্ছেন কেন? সকল নাগরিকের ভালো চাওয়া কি উচিত নয়? রাষ্ট্রের আইন ধর্মের আইনের উর্দ্ধে প্রতিষ্ঠিত হোক।

সরকার যে কারণে ৭২-এর সংবিধান প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি, একই কারণে ‘মুসলিম পারিবারিক আইন-এ হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না! ‘হিন্দু পারিবারিক আইন’ পাল্টাতে পারবেন, কারণ হিন্দুরা দুর্বল? দুর্বলের ওপর সবলের আঘাত, বিষয়টা অনেকটা জোর করে হিন্দু-সম্পত্তি দখলের মত হয়ে যাবে! 

হিন্দু নামধারী যাঁরা এ উদ্যোগের পেছনে জোরালো ভূমিকা রাখছেন, তাঁদের অনেকেই হিন্দু নন, অথবা সুবিধাভোগী! সাধারণ হিন্দুরা মনে করেন, এ উদ্যোগ হিন্দুদের বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্র!

হিন্দুদের উদ্বেগের কারণ হিসেবে একটি দৃষ্টান্ত দেয়া যায়। সদ্য প্রধানমন্ত্রী ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেছেন। জনসংখ্যা অনুযায়ী ৬টি মন্দির, প্যাগোডা বা চার্চ থাকা উচিত ছিলো, তা নেই। বিষয়টি তাও নয়, বিধি অনুযায়ী এই মসজিদগুলোর সভাপতি হবেন ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী অফিসার)। সরকার নিজেই আইন ভঙ্গ করেছেন চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলায়, কারণ তথাকার ইউএনও একজন হিন্দু! সেখানে একজন মুসলিম মৎস কর্মকর্তা সভাপতি হয়েছেন।

আরো দ্রষ্টব্য: ইসলামিক ফাউন্ডেশনে কোন হিন্দু কর্মচারী নেই! প্রধান কার্যালয়ে ১৩৬জন; ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে ১৩জন করে, রাজশাহী ও রংপুরে ৯জন করে, খুলনায় ১১জন, বরিশালে ৬জন, সিলেট ও ময়মনসিংহে ৪জন করে কর্মকর্তার সবাই মুসলমান। বোর্ড অফ গভর্নরসের ১২জনই মুসলমান। এ পর্যন্ত ৩০জন মহাপরিচালক এসেছেন-গেছেন, সবাই মুসলমান। অন্যদিকে হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ১০জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মধ্যে ৩জন অ-হিন্দু। চেয়ারম্যান ধর্মমন্ত্রী, ধর্মমন্ত্রী সর্বদা একটি ধর্মের! সুতরাং----।

যাঁরা বলে বেড়ান যে, হিন্দুরা নাকি সকল উচ্চপদ দখল করে আছেন, তাঁদের জ্ঞাতার্থে বলা যায়, দেখুন, ৫০টি উপজেলায় মাত্র ১জন হিন্দু ইউএনও! এটাই বাস্তবতা। বাংলাদেশে সরকারি চাকুরীতে মাত্র ৩% হিন্দু। সেনাবাহিনী বা পররাষ্ট্র দফতরের প্রসঙ্গ না তোলাই ভালো। বাংলাদেশে হিন্দুরা ভালো নেই। সরকার সংখ্যালঘুদের ‘মঙ্গল’ চাইলে এসব দিকে নজর দিতে পারেন। অযথা হিন্দু পারিবারিক আইন নিয়ে ঝামেলার দরকার কি?

লেখক: শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক থেকে