ঢাকা: বাংলাদেশে হিন্দু পারিবারিক আইন পরিবর্তনের পক্ষে-বিপক্ষে জনমত গড়ে উঠছে। এ নিয়ে বিতর্ক চলছেই। অনেকে শুধু হিন্দু নারীদের পৈত্রিক সম্পত্তিতে সমানাধিকার দাবি করছেন। তবে বৃহত্তর সচেতন মহল শুধু হিন্দু নারী নয়, সকল নারীর জন্যই সমানাধিকার দাবি করছেন।

এঁদেরই একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোবিন্দ মণ্ডল এই দাবির পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে বক্তব্য রেখেছেন।

শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) এই আইন বিশেষজ্ঞ জানান, কেন তিনি শুধু হিন্দু নারী নয়, দেশের সকল নারীরই সমানাধিকার চান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেখুন, যে কোন আধুনিক সভ্য রাষ্ট্রে নারী-পুরুষেরা সমান অধিকার পাবেন কি-না, এ নিয়ে কোন যুক্তি বা তর্কের অবকাশ নেই। আমরা না আধুনিক, না সভ্য, না গণতান্ত্রিক। আমাদের রাষ্ট্র ও রাজনীতি এবং ধর্ম ও সমাজচিন্তা ভয়ঙ্কর বৈপরীত্য ও গোজামিলে ভরা। শুধু একটিমাত্র বিষয়ে আমাদের প্রবল ঐক্যমত্য- যে দুর্বল, তাকে আরো বেশি করে শোষণ করতে করতে মেরে ফেলা। সেজন্য যে চিরকাল শুধু মার খেয়েছে, হঠাৎ প্রীতির কথায় আঁতকে উঠলে তাকে দোষ দেওয়া যায় না।’

তিনি বলেন, ‘নারী, সংখ্যালঘু বা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকারের প্রশ্নে বাংলাদেশ রাষ্ট্র কখনোই গণতান্ত্রিক হতে পারেনি। উপরন্তু, রাষ্ট্র ও সরকারের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান যেভাবে মৌলবাদের ছায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে এ বিষয়ে বিশেষ কোন অগ্রগতির আশা দেখিনা। এরকম একটি সিস্টেমে রাষ্ট্রের দিক থেকে একটি জেনুইন হলিস্টিক অ্যাপ্রোচ না থাকলে যে কোন শুভ উদ্যোগ আস্থার সংকটে পড়বে।

তিনি গুরুত্বের সঙ্গে বলেন, ‘খেয়াল করে দেখবেন, আপনার প্রতিবেশীর সংকট আপনার চেয়ে কোন অংশে কম নয়। নারী-পুরুষ ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে মিলে সমানভাবে ভালো থাকতে না চাইলে কারো পক্ষেই ভালো থাকা সম্ভব হবে না।’

তাঁর মতে, ঘরের অধিকাংশ ময়লা অক্ষত রেখে কিছু অংশ পরিস্কার করলে তাকে কেউ পরিচ্ছন্ন ঘর বলে না। সে পরিছন্নতা স্থায়ীও হয় না। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরাতন ময়লা এসে নতুন জায়গা ঢেকে দেয়, এটা ময়লার ধর্ম।

‘দেশটাকে বাসযোগ্য করতে হলে দেশের সব মানুষের কথা সমানভাবে ভাবার কোন বিকল্প নেই’, যোগ করেন তিনি।

প্রতিবেদক, বাংলাদেশ দর্পণ