পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায় ভয়াবহ বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে। দেশটির ওন্ডো রাজ্যের একটি ক্যাথলিক গির্জায় স্থানীয় সময় রবিবার (৫ জুন) সাপ্তাহিক প্রার্থনায় সমবেতদের ওপর গুলি চালায় বন্দুকধারীরা। এতে শিশুসহ অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকেই। খবর আলজাজিরা।

নাইজেরিয়ার আইনপ্রণেতা ওগুনমোলাসুয়ি ওলুওলে জানিয়েছেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ওন্ডো রাজ্যের ওয়ো শহরের সেইন্ট ফ্রান্সিস ক্যাথলিক চার্চে প্রার্থনার সময় প্রার্থনাকারীদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় বন্দুকধারীরা। হামলার পরপরই পালিয়ে যায় তারা।

ওয়ো শহরের এক কর্মকর্তা বলেছেন, এতে প্রায় অর্ধশত মানুষ নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অনেকেই শিশু। আইনপ্রণেতা ওগুনমোলাসুয়ি ওলুওলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেছেন, ওয়োর ইতিহাসে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা আমরা এর আগে কখনো দেখিনি। এটা বড্ড বাড়াবাড়ি।

ওয়ো হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, কমপক্ষে ৫০টি মরদেহ ওয়ো ফেডারেল মেডিকেল সেন্টার ও সেই লুইস ক্যাথলিক হসপিটাল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। রাজ্যের গভর্নর আরাকুনরিন ওলুওয়ারোতিমি আকেরেদোলু বলেছেন, এ ঘটনায় আমাদের হৃদয় ভেঙে গেছে। শত্রুরা আমাদের শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর হামলা চালিয়েছে।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ওই এলাকা অতিক্রমের সময় তিনি বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ শুনেছেন। ওই প্রত্যক্ষদর্শী আরও দাবি করেছেন, চার্চের আঙিনায় তিনি অন্তত পাঁচ বন্ধুকধারীকে দেখেছিলেন।

সরকারের পক্ষ থেকে এ হামলার নিন্দা জানানো হয়েছে। বন্দুকধারীদের ‘শয়তান’ অভিহিত করে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বুহারি বলেছেন, শুধু উত্তরাঞ্চলের শয়তানরাই এমন জঘন্য কাজ করতে পারে। তবে শয়তান বলতে তিনি ঠিক কাদের বুঝিয়েছেন তা স্পষ্ট করেননি তিনি।

চার্চ হামলাকে ‘জঘন্য ও শয়তানি’ অভিহিত করেছেন ওন্ডো রাজ্যের গভর্নর আরাকুনরিন ওলুওয়ারোতিমি আকেরেদোলুও। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, যেকোনো উপায়েই হোক হামলাকারীদের আটক করা হবে এবং এ হামলার ক্ষতিপূরণে বাধ্য করা হবে।

তাৎক্ষণিকভাবে হামলার কারণ জানা যায়নি। কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বা অন্য কেউ এখন পর্যন্ত হামলার দায় স্বীকার করেনি। নাইজেরিয়ায় জঙ্গি গোষ্ঠী বোকো হারামের তৎপরতা রয়েছে। বেশিরভাগ অঞ্চলে নিরাপত্তা রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছে দেশটির সরকার। তবে ওন্ডো রাজ্য অপেক্ষাকৃত শান্তিপূর্ণ। বন্দুক হামলার ঘটনাস্থলটি নাইজেরিয়ার সবচেয়ে বড় শহর লাগোস থেকে ৩৪৫ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত।

চার্চ কর্তৃপক্ষও হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে চার্চের বিশপ ও পুরোহিতদের অপহরণ করা হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে খবর ছড়িয়ে পড়েছে তা নাকচ করেছেন।

এদিকে, ঘটনাস্থলের বেশ কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, চার্চের মেঝেতে প্রার্থনাকারীদের নিথর ও রক্তাক্ত মরদেহগুলো শায়িত রয়েছে। পাশেই কিছু মানুষ বিলাপ করছেন।

এ চার্চ হামলার খবরে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন খ্রিস্টান ধর্মীবলম্বীদের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস। ভ্যাটিকানের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পোপ নাইজেরিয়ার ওন্ডো চার্চ হামলা, প্রার্থনাকারী ও শিশুদের মৃত্যুর বিষয়টি অবগত আছেন। ঘটনা বিস্তারিত শোনার পর নাইজেরিয়া ও হামলার ভুক্তভোগীদের জন্য প্রার্থনা করেছেন তিনি। 


প্রতিবেদক, বাংলাদেশ দর্পণ