বিশ্বজুড়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। এখন মহামারির এই ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন আতঙ্ক বাড়াচ্ছে। একেক সময় এ ভাইরাসের একেক উপসর্গ সামনে আসছে।

বর্তমানে কোভিড রোগীরা সর্দি-কাশি, কোমরে ব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়াসহ একাধিক সমস্যায় ভুগছেন। প্রথম দিকে এর উপসর্গ মৃদু ভেবেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সময় যেতেই দেখা দিচ্ছে ওমিক্রনের ভয়াবহতা। ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীদের পরবর্তীতে দীর্ঘ কোভিডের ঝুঁকিও বাড়ছে।

ওমিক্রনের বেশ কয়েকটি উপসর্গের সঙ্গে আরও একটি লক্ষণ যোগ হয়েছে। কোভিড সংক্রমণের সম্ভাব্য চিহ্ন হিসেবে যা আপনার চোখে দেখা দিতে পারে। সাম্প্রতিক করোনা রোগীরা তাদের চোখ চুলকানোর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছে। শুধু চুলকানিই নয়, এর সঙ্গে দেখা দিচ্ছে চোখে ব্যথাও।

এমনকি বেশ কিছু লোক তাদের সাম্প্রতিক কোভিড সংক্রমণে চোখ চুলকানোর অভিজ্ঞতা সম্পর্কে টুইট করেছেন। একজন টুইটার ব্যবহারকারী তার ওমিক্রনের বিষয় সম্পর্কে বলেছেন, ‘গলা ব্যথা দিয়ে শুরু হয়। তা কয়েকদিন পর সেরে গেলেও প্রচুর হাঁচি, নাক ও চোখ চুলকানোর সমস্যায় ভুগছি।’

অন্য আরেকজন একই রকম অভিজ্ঞতা টুইট করেছেন। ‘ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়ে প্রায় তিন দিন পেশী ব্যথা, প্রচণ্ড জ্বর, চোখ চুলকানো, বমি বমি ভাব ও কাশিতে ভুগেছি।’

করোনার আগের রূপগুলোতে চোখের সমস্যা তেমন দেখা দেয়নি। তবে মায়ো ক্লিনিকের মতে, গোলাপী চোখ, আলোর সংবেদনশীলতা, চোখ ঘা ও চুলকানির মতো সমস্যাগুলো আগেও রিপোর্ট করা হয়েছে।

জনস হপকিন্স সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটির একজন সিনিয়র স্কলার আমেশ এ. অ্যাডালজা (এমডি) ব্যাখ্যা করেছেন, করোনা ভাইরাস চোখের কনজেক্টিভাকে প্রভাবিত করতে পারে। চিকিৎসকরা বলছেন, চোখে চুলকানি ওমিক্রনের লক্ষণ হতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, ওমিক্রন ফুসফুসের পরিবর্তে উপরের শ্বাসযন্ত্রের ট্র্যাক্টকে প্রভাবিত করছে। যা ভাইরাসের আগের সংস্করণের বিপরীত। এ বিষয়টি টেনেসির মেমফিসের সেন্ট জুড চিলড্রেনস রিসার্চ হাসপাতালের শিশু সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডিয়েগো হিজানো ইউএস নিউজ অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্টকে নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘ওমিক্রন দেখতে অনেকটা উপরের শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের মতো। ফলস্বরূপ, এ বৈকল্পিকটি নাক, গলা ও চোখের মতো এলাকায় আরও উপসর্গ তৈরি করছে।’ ‘ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটি কলেজ অব অপটোমেট্রির অ্যাডভান্সড ওকুলার কেয়ার সার্ভিসের প্রধান তাতেভিক মুভসিসিয়ান, ওডি নিউজ আউটলেটকে বলেছেন, ‘ওমিক্রনের প্রভাব চোখে জ্বালা-পোড়া, চুলকানি ও ব্যথাসহ অস্বস্তিকর অনুভূতি হতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যে কোনো ভাইরাস শরীরে সংক্রমণ ঘটালে প্রতিক্রিয়া হিসেবে চোখে প্রদাহ ঘটতে পারে। আর এ কারণেই চোখে লালভাব ও চুলকানি হয়।’

তবে চোখ চুলকানি কিংবা ব্যথা শুধু ওমিক্রনের প্রভাবেই হতে পারে তা কিন্তু নয়। অ্যালার্জির কারণেও চোখ চুলকাতে পারে। তবে চুলকানির পাশাপাশি যদি ঠান্ডা-কাশি, পেশি বা কোমর ব্যথা, গল ব্যথা, কানে ব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে দ্রুত কোভিড টেস্ট করান। চোখ অতিরিক্ত চুলকালেও কখনো হাতে আঙুল দিয়ে ঘষবেন না। এটি চুলকানিকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে। এমনকি আপনার চোখের পানিতে থাকা ভাইরাস অন্যদেরকেও আক্রান্ত করতে পারে।

পেন মেডিসিনের চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ভ্যাটিনি বুনিয়া (এমডি) এ বিষয়ে প্রিভেনশনকে বলেছেন, ‘চোখের জ্বালা প্রশমিত করতে এক্ষেত্রে ওটিসি অ্যান্টিহিস্টামিন চোখের ড্রপগুলো সাহায্য করতে পারে।

কোভিড নেগেটিভ হওয়ার পরও যদি আপনি চোখের চুলকানিতে ভোগেন তাহলে চক্ষুবিদের পরামর্শ নিন।

 

প্রতিবেদক,বাংলাদেশ দর্পণ