ওমিক্রনের পর করোনার আরও একটি ভয়ঙ্কর ধরন হানা দিতে পারে। এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন চীনের বিজ্ঞানীরা। নতুন এ রূপের নাম নিওকোভ। উহানেরে এক গবেষণায় এ রূপের সন্ধ্যার মিলেছে। চীনের বিজ্ঞানীদের দাবি, ভয়ঙ্কার এ ভাইরাসে সংক্রমিত প্রতি তিনজনে একজনের মৃত্যু হতে পারে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এ ভাইরাস মানুষের জন্য কতটা হুমকি, তা নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
 
এছাড়া রাশিয়ার ‘ভেক্টর রাশিয়ান স্টেট রিসার্চ সেন্টার অব ভাইরোলজি অ্যান্ড বায়ো-টেকনোলজি’ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ ভাইরাস নিয়ে এখনই চিন্তার কিছু নেই। মানব শরীর এ ধরনটিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা খুবই ক্ষীণ।

এদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওমিক্রমন সংক্রমণ কিছুটা কমেছে। যুক্তরাজ্য, ইতালি ও জার্মানিসহ বেশ কয়েকটি দেশে আগেই বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছিল। এবার ভারতের দিল্লিতেও করোনার বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। খুলেছে শহরটির রেস্তোরাঁ ও সিনেমা হল। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, দক্ষিণ আফ্রিকার বাদুড়ের মধ্যে নিওকোভ ভাইরাসটি পাওয়া গেছে, মানুষের জন্য এটি কতটা ক্ষতিকর তা নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন। রাশিয়ান বার্তা সংস্থা তাসকে স্বাস্থ্য সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেছেন, উহানের বিজ্ঞানীদের নতুন আবিষ্কার সম্পর্কে তারা সচেতন। বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ইতোমধ্যে বিশ্ব প্রাণি স্বাস্থ্য সংস্থা, খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও জানায়, মানুষের সংক্রামক রোগের ৭৫ ভাগই ছড়ায় বিশেষ করে বন্যপ্রাণি থেকে। এর বেশিরভাগই নতুন ভাইরাস থেকে সৃষ্ট। চীনের বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গেছে, নিওকোভ ওমিক্রন অনেক থেকে বেশি শক্তিশালী। এটি শ্বাসযন্ত্রকে খুব সহজেই প্রভাবিত করতে পারে। এমনকি এতে সংক্রমিত প্রতি তিনজনে একজনের মৃত্যুও হতে পারে।

উহানের একটি ওয়েবসাইটে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, বাজারে প্রচলিত কোনো করোনার টিকাই নিওকোভের ক্ষেত্রে কার্যকরী হবে না।

ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (বৃহস্পতিবার) বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৫ লাখ ৫৫ হাজার ১২৫ জন। এরমধ্যে ইউরোপের দেশগুলোতে ১৭ লাখ ২১ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে। আমেরিকা মহাদেশে ১০ লাখের বেশি, এশিয়ায় প্রায় সাত লাখ, আফ্রিকায় ৩৮ হাজার ও ওশেনিয়ায় ৮৬ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে বিশ্বে মোট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৩৬ কোটি ৭৩ লাখের বেশি, মোট মৃত্যু ৫৬ লাখ ৫৮ হাজার জনের।

বৃহস্পতিবার বিশ্বে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে এদিন ৫ লাখ মানুষের করোনা শনাক্ত হয়। এ সময়ে দেশটিতে মারা গেছেন ২ হাজার ৬৮৬ জন। ফ্রান্সে এদিন রেকর্ড ৩ লাখ ৯২ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছেন, দেশটিতে এ সময়ে মারা গেছেন ২৬৩ জন।

এছাড়া ভারতে ২ লাখ ৫১ হাজার, ব্রাজিলে ২ লাখ ২৮ হাজার, যুক্তরাজ্যে ৯৬ হাজার, ইতালিতে ১ লাখ ৫৫ হাজার, জার্মানিতে ১ লাখ ৮৯ হাজার লোকের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

চল্লিশের বেশি দেশে ওমিক্রনের উপধরন বিএ-২ : ওমিক্রনের নতুন উপধরন বিএ-২ বিশ্বের ৪০টির বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। জানুয়ারির প্রথম ১০ দিনে ব্রিটেনে অন্তত ৪০০ জন এতে সংক্রমিত হয়েছেন।

ডেনমার্ক, ভারত, সুইডেনসহ আরও বেশকিছু দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ওমিক্রনের নতুন এই উপ-ধরন। এটির জিনোম মিউটেশনের সঠিক প্রভাব এখনও অস্পষ্ট। ফলে ওমিক্রন বিএ-২-এর প্রভাব কতটা, তা এখনও জানা যায়নি। তবে, দ্রুত এর বিস্তার হচ্ছে। আর সেখান থেকেই মিলছে বিপজ্জনক ইঙ্গিত। বিশেষজ্ঞদের একাংশের আশঙ্কা, ওমিক্রন ধরনের চেয়েও বেশি সংক্রামক হতে পারে এর উপধরন।

 

প্রতিবেদক, বাংলাদেশ দর্পণ