ঢাকা: নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের চৌমুহনীতে মন্দিরে হামলা ও লুন্ঠনের ঘটনায় মন্দিরের লুন্ঠিত সামগ্রীসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

তথ্য মতে, সাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লায় ঘটে যাওয়া ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর ও উসকানিমূলক তথ্য প্রচার করে জনসাধারণের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চেষ্টা চালায়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ অক্টোবর নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানাধীন চৌমুহনী এলাকায় কিছু দুষ্কৃতিকারী শ্রী শ্রী রাধামাধব জিউর মন্দিরে হামলা ও লুটতরাজ চালায় একটি চক্র।

র‌্যাব জানায়, এ সংক্রান্ত কিছু ভিডিও ফুটেজ বিভিন্ন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। উক্ত ঘটনায় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানায় একাধিক মামলা দায়ের করা হয়। ওই ঘটনায় হামলা ও লুটকারীদের শনাক্ত এবং গ্রেফতার করতে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে এবং তাদেরকে আইনের আওতায় আনে।

আজ সোমবার এ বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।।

সংবাদ সম্মেলনে মিডিয়া পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আলোচিত এ ঘটনার অপরাধীদের র‌্যাব-১১ এর আভিযানিক দল ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ৭ নভেম্বর  রাতে রাজধানীর ডেমরা, নারায়ণগঞ্জের বন্দর এবং নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ হতে চৌমুহনীর মন্দিরে হামলা এবং লুটপাটে জড়িত (১) মো. মনির হোসেন ওরফে রুবেল (২৮), (২) জাকের হোসেন ওরফে রাব্বি (২০), (৩) মো. রিপন (২১) এবং (৪) মো. নজরুল ইসলাম @ সোহাগ (৩৬), বেগমগঞ্জ, জেলা-নোয়াখালীদের’কে গ্রেফতার করে। 

তিনি আরো বলেন, এ সময় তাদের নিকট হতে মন্দিরের লুন্ঠিত পূজার সামগ্রী ০৭টি পিতলের তৈরি প্রতিমা/মূর্তি, ০৩টি সিদুঁর কৌটা, ২০টি বাতির কৌটা, ২টি ধুপবাতি, ৫টি পঞ্চ বাতির দানি, ২টি হাত ঘন্টা, ১০টি স্ট্যান্ডসহ মুছি বাতি, ১টি কুলা, ৫টি পঞ্চ পাতার পল্লব, ১ টাকা মূল্যের ৫৫০টি বাংলাদেশী মুদ্রার কয়েন, ১১টি গ্লাস, ৫টি বাসন, ৭টি ঘটি, ৪টি ইমিটিশনের গলার হার ও ২টি মালা, ৬টি ইমিটিশনের হাতের বালা, ৬ জোড়া ইমিটিশনের কানের দুল, ১টি ইমিটিশনের চেইন, ১২টি বিভিন্ন রকমের চুল বাঁধার কাঁকড়া, ৬টি নেইল পলিশ, ১ সেট পিতলের অলংকার, ২টি মঙ্গল সূত্র, ১টি আগরবাতি দানি, ১টি পিতলের ডাব, ১টি ওম, ২টি কাসন, ১ সেট আকমন পাত্র, নগদ ৩০৫ টাকা এবং ৪০টি পিতলের তৈরি বিভিন্ন আইটেমের পূজা কার্যে ব্যবহৃত ভাঙ্গা/অসম্পূর্ণ অংশ উদ্ধার করা হয়। 

র‌্যাবের এই মিডিয়া পরিচালক বলেন, এছাড়াও মন্দিরে হামলায় অংশগ্রহণের সময় মোঃ মনির হোসেন ওরফে রুবেল এর পরিহিত গেঞ্জী ও লুঙ্গী এবং হামলায় ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়েছে।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত রুবেল, রাব্বী এবং রিপন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উস্কানিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে প্ররোচিত হয়ে প্রত্যক্ষভাবে হামলায় অংশগ্রহণ করে। হামলা পরবর্তী গ্রেফতারকৃত রুরেল, রাব্বী এবং রিপন ২টি বস্তায় করে মন্দিরের বিভিন্ন পিতলের পূজার সামগ্রীসহ অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায়। তারা গ্রেফতারকৃত সোহাগ এর সহযোগিতায় ধাতব আইটেমসমূহ রুপান্তর করে বিক্রির পরিকল্পনা করেছিল। মন্দিরে মালামাল লুট করার সময় রুবেল এর ভিডিও ফুটেজ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মিডিয়াতে ভাইরাল হয়। গ্রেফতারকৃত রুবেল, রাকিব, রিপন এবং সোহাগ বিভিন্ন পেশায় জড়িত। গ্রেফতারকৃত রুবেল এর বিরুদ্ধে বেগমগঞ্জ থানায় চুরি ও ছিনতাই এর ১টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।  

মঈন আরও বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী ও অপশক্তিকে রোধ করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে র‌্যাবের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। দেশে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে গ্রেফতারে র‌্যাবের এ অভিযান ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।

গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।

প্রতিবেদক, বাংলাদেশ দর্পণ