ঢাকা:দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপে প্রতিমা ভাংচুরের প্রতিবাদ ও পূজামন্ডপে নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু ফোরাম। একই সঙ্গে ফোরামটি প্রতিমা ভাংচুরে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, ভোলা জেলার পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি গৌরাঙ্গ দে এর মুক্তিসহ দুর্গা পূজায় তিন দিনের সরকারি ছুটির দাবি জানিয়েছে।

শুক্রবার (১ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু ফোরাম, হিন্দু যুব ফোরাম ও হিন্দু ছাত্র ফোরাম যৌথভাবে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এসব দাবি জানানো হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, চাঁদপুরের কচুয়ায়, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে, নোয়াখালী সদর উপজেলায়, বগুড়া জেলার শেরপুরে, কুষ্টিয়া শহরের আড়ুয়াপাড়াসহ সারা দেশে একের পর এক প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটে চলছে। বিশেষ করে দুর্গোৎসব আসার আগে এ ধরনের ঘটনা সবচাইতে বেশি ঘটে, যা অত্যান্ত উদ্বেগজনক। বিশেষ করে পূজামন্ডেপে প্রতিমা নির্মাণের সময় দুর্গোৎসবকে বিঘ্নিত করার জন্য একটি চক্র এ ধরনের ঘটনা ঘটায়। এধরনের ঘটনা আজ নতুন নয়, বিভিন্ন সরকারের আমলে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ন্যায়বিচার ও প্রতিকার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মিলেনি। তাই বহুবছর আগে দেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক আব্দুল গাফফার চৌধুরী বলেছিলেন, 'এদেশে পূজা হয় কিন্তু পুলিশ পাহারায়, যা স্বাধীন রাষ্ট্রে কাম্য নয়'। প্রতিবছরই এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনাগুলোর জন্য বিভিন্ন হিন্দু সংগঠন ও সমাজের বিশিষ্ট জনেরা বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু আজও তার কোনো সুরাহা মিলেনি। তাই আমরা বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এসকল সমস্যার সমাধান চাই। ভবিষ্যতে এ ধরনের ন্যক্কারজনক কর্মকান্ড বন্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা না নিলে হিন্দু সম্প্রদায় তা মেনে নেবে না। প্রয়োজনে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু ফোরামসহ তার সমমনা হিন্দু সংগঠনগুলোকে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবে।

তারা আরও বলেন, বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের যৌক্তিক দাবী 'শারদীয় দুর্গা পূজায় সরকারী ভাবে ৩ দিনের ছুটি ঘোষনা'। এখন শরতকাল। কিছুদিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপুজা। শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর তাবৎ বাংলাভাষাভাষি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে শারদীয়া দুর্গা পুজা সবচেয়ে ধর্মীয় উৎসব। বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জে সর্বত্র পারিবারিক কিংবা সার্বজনীন দুর্গাপুজা অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণত ষষ্ঠীতে দেবীর বোধন তথা পুজা শুরু হয় এবং দশমীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পুজা শেষ হয়। দুর্গা পুজোয় ষষ্ঠী থেকে দশমী এই পাঁচ দিনের পুজা অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশের হিন্দুরা সরকারী ছুটি পাচ্ছেন শুধু মাত্র ১ দিন, তথা বিজয়া দশমীর দিন। দুর্গাপুজায় মাত্র এই ১ দিনের সরকারী ছুটির কারণে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় দীর্ঘদিন যাবত দুর্গা পুজোর আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা পরিবার পরিজনের সঙ্গে মিলিত হওয়ার বাসনায় সারা বছর শারদীয় পুজোর এই দিনগুলোর জন্য অপেক্ষায় থাকে।

তারা বলেন, দুর্গা পূজায় ৫ দিনের ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা থাকলেও সরকারিভাবে মাত্র ১ দিনের ছুটি কার্যকর থাকায় কারো পক্ষেই পরিবার পরিজনের সাথে ধর্মীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার সুযোগ থাকে না। বিজয়া দশমীতে বাবা-মা, গুরুজন ও প্রতিবেশীদের প্রণাম করা ও আর্শীবাদ গ্রহণ একটি ধর্মীয় সামাজিক রীতি। কিন্তু একদিন ছুটি থাকায় সরকারী ও বেসরকারী চাকরিজীবী কারও পক্ষেই গ্রামে গিয়ে বাবা মা বা গুরুজনদের সান্নিধ্য লাভের সুযোগ হয় না। ফলে পূজার দিনগুলো বাবা-মা সন্তান ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মানসিক কষ্টের মধ্যেই কাটাতে হয়।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক মানিক চন্দ্র সরকার, সহ-সভাপতি কালীপদ মজুমদার, বাংলাদেশ হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, হিন্দু হেরিটেজ ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আশালতা বৈদ্য প্রমুখ।


প্রতিবেদক, বাংলাদেশ দর্পণ