গোপালগঞ্জ:হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূঁজা উপলক্ষে গোপালগঞ্জ জেলায় এক হাজার ২২৮টি মন্দিরে শুরু হয়েছে প্রতিমা তৈরীর কাজ। তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পী ও আযোজকেরা। ইতিমধ্যে খড়, মাটি আর দো-আঁশ মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরী কাজ শেষ হয়েছে। তবে এবছর করোনা ভাইরাসের কারনে জাঁকজমকপূর্ণভাবে না হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা আয়োজনে ব্যস্ত রয়েছেন আয়োজকেরা।

বাংলাদেশ পূঁজা উদযাপন পরিষদ, গোপালগঞ্জ শাখা সূত্রে জানাগেছে, এ বছর গোপালগঞ্জ জেলায় ১ হাজার ২২৮টি মন্দিরে পূঁজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সদর উপজেলায় ৩২১টি মন্দিরে পূঁজা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া কোটালীপাড়া উপজেলায় ২৯০টি, মুকসুদপুর উপজেলায় ২৮৭টি, কাশিয়ানী উপজেলায় ২৩৪টি এবং টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ৯৬টি মন্দিরে পূঁজা অনুষ্ঠিত হবে।


জেলার বিভিন্ন মন্দির ঘুরে দেখা গেছে, গোপালগঞ্জের সকল মন্দিরগুলোতে শুরু হয়েছে প্রতিমা তৈরীর কাজ। এবছর ১১ অক্টোবর মহাষষ্ঠীতে দেবী বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে দূর্গা পূঁজার আনুষ্ঠিকতা। চলবে আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত। এবছর মহাষষ্ঠীতে ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে পৃথিবীতে আসবেন আর পূঁজার সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে দোলায় চড়ে কৈলাশে ফিরবেন দেবী দূর্গা। ঢাকের বাজনা, উলুধ্বনি আর আরতীতে মুখরিত হয়ে উঠবে গোপালগঞ্জের পাড়া-মহল্লা থেকে গ্রাম।

ইতিমধ্যে মন্দিরগুলোতে খঁড় ও মাটি দিয়ে পরম যত্নে গড়ে উঠছে প্রতিমা। এখন চলছে দোঁ-আঁশ মাটির কাজ। আর এসব প্রতিমা তৈরীতে দম ফেলার ফুসরত নেই প্রতিমা শিল্পীরা। এরপর রং তুলির টানে প্রতিমাগুলো ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন প্রতিমা শিল্পীরা। দেবী মা দুর্গা তার সাথে বিদ্যার দেবী স্বরসতী, ধন সম্পদের দেবী লক্ষ্মী এবং তার সাথে দেবতা কার্তিক ও গনেশসহ নানা দেব-দেবীর প্রতিমার রূপকে ফুটিয়ে তুলবেন নিপুন হাতের ছোঁয়ায়।

এ বছর এক-একজন প্রতিমা শিল্পীরা ৪ থেকে ৮টি করে প্রতিমা তৈরী করেছেন। তবে করোনাকালীন সময়ে চাহিদার তুলনায় মজুরি কম পেলেও বাপ দাদার আদি পেশা টিকিয়ে রেখেছেন তারা।
এদিকে করোনা প্রাদুর্ভাবের কারনে এবছর জাঁক-জমকভাবে পূজার আয়োজন করছেন না আয়োজকেরা। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দর্শনার্থীদের প্রতিমা ও পূঁজা দেখার ব্যবস্থা করছেন তারা। মন্দির ও সড়কগুলোতে করা হবে আলোকসজ্জা।

প্রতিমা শিল্পী রাজীব সেন, রবীন্দ্রনাথ পাল ও পঞ্চনন পাল, জানান, এবছর এক-একজন ভাস্কর ৪ থেকে ৮ টি করে প্রতিমা তৈরি করেছেন। পূঁজা শুরুর দিন পর্যন্ত রং এর কাজ করতে হবে তাদের। তবে করোনাকালীন সময়ে চাহিদার তুলায় মজুরি কম পাচ্ছেন তারা। সেই সাথে দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির এ বাজারে পরিশ্রমের পর প্রতিমা তৈরি করে যে মজুরি পান তা দিয়ে জীবন যাপন করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। অনেকেই এ পেশা ছেড়ে চলে গেছে, তারপরেও বাপ দাদার আদি পেশা টিকিয়ে রাখছেন তারা।

আয়োজক জয়দেব সাহা, ভজন কুঁড়ি, দুলাল বিশ্বাস ও টিটু বৈদ্য জানান, ইতেমধ্যে আমরা সরকার ও পূঁজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা পেয়েছি। এতে স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি শুধুমাত্র মন্দিরের ভিতরে বিভিন্ন আয়োজনের কথা বলেছে। তারপরেও দর্শনার্থীদের চলাচলের সুবিধার্থে সড়কগুলোতে আলোকসজ্জা করা হবে। তবে যারা প্রতিমা দেখতে আসবেন তাদের জন্য তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মনে চলার ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপশি মন্দির কমিটির স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করবে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, গোপালগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি ডা: অসিত কুমার মল্লিক জানান, ইতিমধ্যে আমাদের সাথে বাংলাদেশ পূঁজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাথে আলোচনা হয়েছে। এ বছর শুধু মাত্র মন্দিরের মধ্যে আলোকসজ্জ্বা করা হবে। বাইরের সড়কগুলোতে আলোকসজ্জ্বা, গান বাজনাসহ কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে না। প্রতিটি মন্দিরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে প্রতিটি মন্দিরে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পুলিশের পাশাপশি মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক রাখতে বলা হয়েছে। সরকারী আইন মানার বিষয়টি তারা দেখভাল করবেন। এছাড়া বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মন্দির পরিদর্শন করা হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জেলা গোপালগঞ্জে এ বছর নির্বিঘ্নে পূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

 

প্রতিবেদক, বাংলাদেশ দর্পণ