বাগেরহাটের কচুয়ায় ড্রাগন চাষেই ভাগ্য খুলেছে কামরুলের। নিজের আঙ্গিনায় শখের বশে লাগানো কয়েকটি গাছ থেকে তার এখন শতাধিক গাছ। দুই একর জমিতে নতুন করে ড্রাগন চাষ করে মৌসুমের অর্ধেক সময়েই অর্ধ লক্ষাধিক টাকার ফল বিক্রি করেছেন। কামরুলের সফলতা দেখে প্রতিবেশীরাও ঝুঁকছেন ড্রাগন ফল চাষে। 

মাত্র তিন বছর আগে বড় ভাইয়ের দেয়া চারা দিয়ে ড্রাগনের চাষ শুরু করেন জেলার কচুয়া উপজেলার শিয়ালকাঠি গ্রামের কামরুল ইসলাম। বড় ভাইয়ের পরামর্শে নিজেদের খাওয়ার জন্য নিজ বাড়ির উঠোনে কয়েকটি চারা রোপণ করেন কামরুল। ৬ মাস পরেই ফল আসে এই গাছে। গাছের ফলের চেহারা ও স্বাদে মুগ্ধ হন কামরুল ও তার পরিবার। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ নিয়ে এক বছরের মাথায় নিজের গাছের কাটিং (গাছের ডালের মতো কিছু অংশ) দিয়ে চারা তৈরি করেন তিনি।

দ্বিতীয় বছরেই নিজের তৈরি বেশ কিছু চারা রোপণ করেন তিনি। ২০১৯ সালের শেষের দিকে অর্থাৎ কামরুলের ড্রাগন চাষের তৃতীয় বছর বাড়ির উঠানেই ২০টি ঝাড়ে (পিলারে) কামরুলের ড্রাগন গাছের সংখ্যা পৌঁছায় ১২০ টিতে। মাত্র ২ থেকে ৩ শতক জমিতে লাগানো শতাধিক গাছ দিয়ে এ পর্যন্ত অর্ধ লাখ টাকার বেশি বিক্রি করেছেন। গাছে যে ফুল ও ফল রয়েছে তাতে আরও সমপরিমাণ আয় হবে এবার কামরুলের। অন্য কাজ ছেড়ে দিয়ে এখন শুধু ড্রাগন চাষে মন দিয়েছেন কামরুল ইসলাম।

কামরুল ইসলাম বলেন, আমার বড় ভাই চাকুরির সুবাদে চট্টগ্রাম থাকেন। বছর চারেক আগে ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসার সময় কিছু ড্রাগনের কাটিং (চারা) নিয়ে আসেন যা আমি কোনো মতে লাগাই। কোন যত্নও করিনি। মাত্র ৬ মাসেই গাছে ফল আসায় আমি অবাক হয়ে যাই। তখন যত্ন নিতে থাকি গাছগুলোর। দ্বিতীয় বছর থেকে গাছের কাটিং দিয়ে চারা তৈরি শুরু করি। বর্তমানে ২০টি খুঁটিতে আমার ১০০ এর মতো গাছ রয়েছে। এবার প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার বিক্রি করেছি। এ বছর আরও ৫০ হাজার টাকার মতো ফল বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি। এছাড়া ড্রাগন গাছের কাটিং দিয়ে চারা তৈরি করে বিক্রি করছি। তা দিয়েও ভালো আয় হচ্ছে আমার।

তিনি বলেন, এ বছর আমি নতুন করে দুই একর জমিতে ড্রাগনের চাষ শুরু করেছি। প্রতিদিনই দুই একজন লোক আমার ড্রাগন ক্ষেতে কাজ করছেন। অনেকে আমার দেখাদেখি ড্রাগন চাষ শুরু করেছেন।

কামরুল চাষ প্রসঙ্গে বলেন, এই গাছে তেমন সার ওষুধ দেয়ার প্রয়োজন হয় না। শুধুমাত্র আগাছা পরিষ্কার ও মাঝে মাঝে ছত্রাকনাশক দিলেই গাছ থেকে ভালো ফল পাওয়া যায়।

প্রতিবেশী হাফিজুর রহমান বলেন, কামরুলের বাড়িতে বিদেশি ফল ড্রাগনের ফলন দেখে আমাদের ভালো লাগে। কামরুলের কাছ থেকে আমরা কিনে নিয়ে এই ফল খাই। এছাড়া মাঝে মাঝে কামরুল আমাদেরকে প্রতিবেশী হিসেবে খেতেও দেয়।

কামরুল ইসলামকে দেখে ড্রাগন চাষ শুরু করা ইমতিয়াজ শেখ এবং আলমগীর হোসেন বলেন, কামরুলের বাড়ির উঠোনে যে পরিমাণ ড্রাগন হয়েছে আমরা দেখে অবাক হয়েছি। ফলের দামও অনেক ভাল। এবছর ৩‘শ থেকে ৫-৬শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। কামরুল এবং কচুয়া কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের পরামর্শে আমরাও বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষ শুরু করেছি। আশা করি এর মাধ্যমে আমরা আর্থিকভাবে সফল হব।

ড্রাগন চাষে ব্যয়ের বিষয়ে কামরুল বলেন, চারটি গাছের জন্য একটি পিলার প্রয়োজন হয়। প্রতিটি চারা অন্য ৩৫ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি করি। প্রতিটি পিলারের খরচ পরে ৫০০ থেকে ৭৫০ টাকা পর্যন্ত। আমার দুই একর জমিতে ৮০০ পিলারে ৩ হাজার ২০০ চারা রয়েছে। ভূমি উন্নয়ন, পিলার, সার ও চারা সব মিলিয়ে ৮ লাখের বেশি টাকা খরচ হয়েছে। তবে একবার শুরু করার পরে খরচ খুবই কম। মাসে আগাছা পরিষ্কার, সেচ ও ছত্রাক নাশক স্প্রে করতে হাজার পাঁচেক টাকা খরচ হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রঘুনাথ কর বলেন, ড্রাগন একটি বিদেশি ফল। পুষ্টিগুণ, আকার-আকৃতি ও দামের কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্ব বাজারে এই ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ক্যাকটাস জাতীয় গাছ হওয়ায় রোগ বালাইও কম। তাই চাষিরা সহজে এই ফল চাষ করতে পারে। ড্রাগনের চারা অবশ্যই রোদের জায়গায় রোপণ করতে হবে। রোপণের কয়েকদিন পূর্বে ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করে জৈব সার দিয়ে দিতে হবে। আট ফুট দূরত্বে পিলার দিয়ে পিলারের চার পাশে চারটি করে গাছ লাগানো যায়। কনক্রিটের পিলারের উপরে লোহার রডের সাথে সাইকেল বা ভ্যানের পুরনো টায়ার দিয়ে দিতে হবে যাতে গাছগুলো বড় হলে ওই টায়ারে থাকতে পারে। ছাদের টবেও এই গাছ রোপণ করা যায়। ফলও ভালো হয়।

বাগেরহাটে নিজ উদ্যোগে এবং কৃষি বিভাগের সহায়তায় কচুয়া উপজেলার শিয়ালকাঠি গ্রামের কামরুল সহ অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষ শুরু করেছেন। বাণিজ্যিক, অবাণিজ্যিক ও ছাদ কৃষি সব মিলিয়ে বাগেরহাটে ১০ একরের উপরে জমিতে ড্রাগন চাষ হয়েছে। চাষিরা ফলও পাচ্ছেন ভালো।