শারদীয় দুর্গোসৎব সনাতন তথা হিন্দু ধর্মালম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলেও শুধুমাত্র মাগুরা জেলায় এর ব্যাতিক্রম লক্ষ করা যায়।
এখানে প্রতি বছর বর্ণাঢ্য আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় কাত্যায়নী পুজা। কাত্যায়নী পুজোৎসবই জেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসবে পরিনত হয়েছে। আয়োজনের ব্যাপকতা ও সার্বজনীনতা এই পুজোৎসবকে মাগুরার ঐতিহ্যে স্থান এনে দিয়েছে। সাধারনত দুর্গা পুজার এক মাস পর শুরু হয় কাত্যায়নী পুজা ও উৎসব।
পুজা চলে ৫ দিন এবং উৎসব চলে মাসব্যাপী। আজ মহা ষষ্টী। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যাবসায়ীরা মেলায় দোকান সাজায় রকমারি পণ্যের পসরা নিয়ে। সুদুর কক্সবাজারের ঝিনুকমালা থেকে, সুই-সুতা সবই পাওয়া যায়। এ মেলায় সব থেকে বড় চমক নানা ধরনের কাঠের তৈরি আসবাবপত্র এবং শীতের পোশাক, ঢাকা থেকে আগত কম্বল ইত্যাদি। লাখ টাকা দামের বাদশাহী পালংক থেকে শুরু করে গরিবের ঘর সাজানোর মতো সস্তা রকমারি আসবাবপত্র সবই মিলবে এখানে।
প্রতি বছর মাগুরা কাত্যায়নী পুজার মেলায়১০ কোটি টাকার উর্ধ্বে আসবাব সামগ্রী বিক্রি হয়। দুর্গা পুজার অনুরুপ সুধু সময়ের পার্থক্য ছাড়া কাত্যায়নী পুজার প্রতিমা থেকে শুরু করে আর সবকিছুই এক রকম, শুধু শ্রীশ্রী কাত্যায়নী দেবীর কোলে গোপাল শ্রীকৃষ্ণের একটি মূর্তি থাকে অতিরিক্ত। শাস্ত্রমতে প্রাচীনকালে বৃন্দাবনের গোপীরা শ্রীকৃষ্ণেকে পাওয়ার আশায় যমুনার তীরে এ পূজা করেন। কালক্রমে হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে এ পুজা তেমন ব্যাপকতা লাভ করেনি উপমহাদেশেরের কোথাও। কেউ কেউ পারিবারিকভাবে এ পূজা করলেও তা উৎসবে রুপ নেয় নি এক্ষেত্রে মাগুরা উপমহাদেশের মধ্যে অন্যতম। পাকিস্তান আমলে পারনান্দুয়ালি গ্রামের বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী সতীশ মাঝি সপ্নাদিষ্ট হয়ে তার বাড়িতে প্রথম এ পুজা করেন। তার দেশ ত্যাগের পর এ পুজা ছড়িয়ে পড়ে মাগুরার বিভিন্ন স্থানে।
জেলা সদরের মধ্যে ৮০ টি মন্দিরে এ পূজা অনুষ্ঠিত হলেও শহরের ১৩ টি মন্দিরে সার্বজনীন ভাবে মহা ধুমধামের সাথে এ পূজা অনুষ্টিত হচ্ছে এবছর। নতুন বাজার স্মৃতি সংঘ, ছানাবাবুর বটতলা, বৈদ্যবাড়ি, নীজনান্দুয়ালি নিতাই গৌর গোপাল সেবাশ্রম, আঠারখাদা সার্বজনীন পূজা মন্দির, জাম্রুলতলা সার্বজনীন পূজা মন্দির, সাতদোহা ন্যাংটা বাবার আশ্রম ও বেলতলা, পারনান্দুয়ালী, তাতীপাড়া সার্বজনীন মন্দির সহ শহরের বিভিন্ন স্থানে এ পুজা অনুষ্টিত হয়। এছাড়াও শালিখা, মোহম্মাদপুর ও শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে পুজার আয়োজন হয়ে থাকে।
পুজার কয়দিন মাগুরা পরিনত হয় উৎসব নগরীতে। ধার্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ প্রতি বছর এই পূজা ও মেলার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। শহরের মোড়ে মোড়ে তৈরি করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন তোরণ, মনোরম আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছে, পৃথিবীর দর্শনীয় স্থাপনা মন্ডপে শোভা পেয়েছে। বিভিন্ন পূজা কমিটির মধ্যে চলে প্রতিযোগিতা। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন স্থান ছাড়াও ভারত, নেপাল থেকেও আসে অনেক দর্শনার্থীর দল। দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিবর্গরা মাগুরাতে আসেন পুজা উপলক্ষে। লাখ লাখ দর্শনার্থীর পদভারে মাগুরা পরিনত হয় জনসমুদ্রে। জেলা প্রসাশক মোঃ অহিদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার জনাব মিনা মাহমুদা, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ ও পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে পৃথবভাবে সভা করেছেন। সিদ্ধান্ত হয়েছে পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যা ব, আনসার ব্যাটেলিয়ান, গ্রাম পুলিশ সহ ম্যাজিস্ট্রিটি মোবাইল টিম, স্বাস্থ্য সেবা ও গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা বিধানের ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে নিরাপদ সুশৃঙ্খলভাবে এই উৎসব বাস্তবায়নে। নিজনান্দুয়ালী নিতাই গৌর গোপাল সেবাশ্রম অধ্যক্ষ চিন্ময়ানন্দ দাস বাবাজী বলেন প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও নিতাই গৌর গোপাল সেবাশ্রম বর্ণাঢ্য আয়োজনে সাজো সাজো রবে আয়োজন করেছে শ্রীশ্রী কাত্যায়নী মায়ের পূজা।
এই পূজায় শ্রীশ্রী
মা কাত্যায়নী ভগবতী ভক্তদের মনে আনন্দ সুখ
শান্তি সমৃদ্ধি নিয়ে আসে প্রতি
বছর। ভক্তদের মনোবাসনা পূরন করতে এই
পূজা সুন্দর সুশৃঙ্খলভাবে উদযাপনে শ্রীশ্রী নিতাই গৌর গোপাল সেবাশ্রম
পূজা কমিটি নিরলস দায়িত্ব পালন করবে। নতুন
বাজার স্মৃতি সংঘের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ছানাবাবুর বটতলা সার্বজনীন পূজা মন্দিরের সভাপতি
সুশীল দে ও সাংগঠনিক
সম্পাদক বাঙ্কা সাহা সহ বিভিন্ন
মন্দির কমিটির নেতৃবৃন্দ বলেন সুন্দর সুশৃঙ্খলভাবে
পূজা বাস্তবায়নে নিরলস দায়িত্ব পালন করবে সকল
পূজা কমিটি। দুর্গাপূজার ন্যায় শ্রীশ্রী কাত্যায়নী পূজা উপলক্ষে জেলা
প্রশাসক, পুলিশ সুপার, আর্মি কমান্ডার, র্যা বের কমান্ডার,
আন্সার ব্যাটেলিয়ান কমান্ডার, গোয়েন্দা সংস্থা, গ্রাম পুলিশ ও প্রতিটা মন্দিরের
স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার কাজে
নিয়োজিত রয়েছে। শহরের আভ্যন্তরীণ সড়কে যানবাহন চলাচল
নিষিদ্ধ ও নিয়ন্ত্রিত করা
হচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত যানবাহনের
জন্য বিশেষ পার্কিং এর ব্যাবস্থা করা
হয়েছে। বিশেষ ট্রাফিক ব্যাবস্থা চালু থাকবে এই-কয়দিনের জন্য। সিভিল সার্জনের দিক নির্দেশনায় মেডিকেল
টিম চিকিৎসাসেবা দানের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
এছাড়া পূজা মন্দিরে প্রসাদ
বিতরণ, অঞ্জলি প্রদান ও আরতি প্রতিযোগিতার
ব্যাবস্থা থাকে। দুর্গা পুজার মতো দশমী তিথিতে
শ্রীশ্রী কাত্যায়নী দেবীর প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়।
সুমন বিশ্বাস
মাগুরা প্রতিনিধি, বাংলাদেশ দর্পণ