নীলফামারী: মাত্র ৮ মিনিট দেরি হওয়ায় ‌ভর্তি বঞ্চিত হলেন নিপুণ বিশ্বাস

প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েও ভর্তি হতে পারলেন না নিপুণ বিশ্বাস! ধূসর হয়ে গেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির নামে 'সোনার হরিণ' ধরা দিয়েও হারিয়ে গেল তার কাছ থেকে।

রোববার বিকেলে ২০২০-২১ সেশনে ৩য় ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেয় যবিপ্রবির স্বাস্থ্য বিজ্ঞান অনুষদের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগ। তবে ভুক্তভোগী ঐ শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে জানতে পারেন রোববার রাত সাড়ে ১১টায়। ভর্তির জন্য বিবেচিত শিক্ষার্থীদের বলা হয়, সোমবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে ভর্তি হতে হবে।

ভর্তি-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে নিপুণ তো তখন নীলফামারীর লক্ষীচাপের নিজ বাড়িতে।ঐ রাতে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে টাকা জোগাড় করে নিয়ে নীলফামারী থেকে যশোর আসতে তার বেলা গড়িয়ে ১২ টা পেরিয়ে যায়। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হতে না পারায় ভর্তি হতে পারেননি ওই শিক্ষার্থী। সময় এত কম ছিল যে চোখের জল ফেলতে ফেলতে বিদায় নিতে হয়েছে তাকে।

নিপুণ বিশ্বাসের বাড়ি নীলফামারীর সদর উপজেলা লক্ষীচাপে। তার পিতা প্রেমানন্দ বিশ্বাস পেশায় একজন নরসুন্দর। দুই ভাইয়ের মধ্যে মেধাবী নিপুণ ছোট বেলা থেকে আর্থিক অনটনের শত বাধা পেরিয়ে নীলফামারীর মশিয়ুর রহমান কলেজ থেকে এইচএসসি উত্তীর্ণ হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েও ভর্তি হতে না পেরে; পরিবারের কাছে না ফিরে হতাশায় ক্যাম্পাসেই অবস্থান করছেন ঐ শিক্ষার্থী।

নিপুণ বলেন, রোববার সাড়ে ৫টার দিকে যবিপ্রবির ওয়েবসাইটের নোটিশে ৩য় ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। আমার কোন স্মার্ট ফোন না থাকায় এই ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেখতে পারিনি।  তাছাড়া যবিপ্রবি থেকে আমার মোবাইল নম্বরে ভর্তির জন্য কোন কল বা মেসেজ দেওয়ার কথা থাকলেও সেটাও দেওয়া হয়নি। মাঝরাতে আমার একজন বড়ভাই আমাকে ফোন করে ভর্তির বিষয় জানালে আমি সাথে সাথে প্রতিবেশি ও স্বজনদের কাছ থেকে ২৩ হাজার টাকা জোগাড় করি। ঐ রাতেই নির্দিষ্ট সময়ে আসার জন্য ১৫ হাজার টাকায় রিজার্ভে একটি প্রাইভেট মাইক্রোবাসে যবিপ্রবির উদ্দেশে রওনা দেই। কিন্তু যশোর থেকে নীলফামারীর দূরত্ব অনেক বেশি হওয়ায় এবং রাস্তার অবস্থা খারাপ হওয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছাতে ১২টা ৮ মিনিট হয়ে যায়।

এরমধ্যে ১০ টার দিকে আমার বিষয়ে একজন বড় ভাই ডিন স্যারের সাথে এই সমস্যার বিষয়ে কথা বলেন। কিন্তু আমি আসার পরে জানতে পারি মেরিট লিস্টে আমি প্রথমে থাকার পরেও তৃতীয় সিরিয়ালে থাকা শিক্ষার্থীকে ভর্তি নেওয়া হয়েছে। এরপর আমি অনেক অনুনয়-বিনয় করলেও তারা আমাকে ভর্তি নেয়নি। এমনকি বিভাগীয় চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে গেলেও চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলতে দেয়নি।

তিনি আরও বলেন, মধ্যরাতে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে এতোগুলো টাকা ধার করে নিয়ে আমার পরিবার ভর্তির জন্য পাঠালো। আমি এখানে এসে ভর্তি হতে পারলাম না। আমি আমার পরিবারকে কি জবাব দিব? যদি সময়সীমা বাড়ানো হতো তাহলে আমি সঠিক সময়ে উপস্থিত হতে পারতাম। তাছাড়াও আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোন মেসেজও দেওয়া হয়নি। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ওয়েটিং লিস্টে থাকায় আমি মেসেজ পেয়েছি, কিন্তু এখানকার প্রশাসন কোন মেসেজ দেয়নি। আমাকে যদি আগে থেকে মেসেজ দেওয়া হতো অথবা নোটিশের পরের দিনই সময় না দিয়ে একটা দিন পরে দেওয়া হতো তাহলে আমি সঠিক সময়ে এসে ভর্তি হতে পারতাম। 

মানবিক কারনে নিপুনকে ভর্তি করে নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় আকুতি জানাচ্ছেন।

 

প্রতিবেদক, বাংলাদেশ দর্পণ