বরগুনাঃ সজল চন্দ্র কর্মকারের পুলিশ কনস্টবল পদে নিয়োগ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন হলেও আলোচনা থেমে নেই। ভূমিহীন হওয়ার কারণে পুলিশের চাকরি না পাওয়া নিয়ে আলোচিত সজল সম্পর্কে এবার বের হয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। বরগুনা জেলায় নিজস্ব জমি না থাকলেও কথিত ‘ভূমিহীন’ সজল চন্দ্র কর্মকার   প্রকৃতপক্ষে ভূমিহীন বা ঠিকানাবিহীন নয়। পটুয়াখালীর সদর উপজেলার লাউকাঠি ইউনিয়নের ঢেউখালী গ্রামে রয়েছে সজলের পিতার ভিটি জমি ও স্থায়ী ঠিকানা। সরেজমিন অনুসন্ধানে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে।  

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সজলের বাবা অমল চন্দ্র কর্মকারের পৈত্রিক বাড়ি পটুয়াখালীর সদর উপজেলার লাউকাঠি ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ঢেউখালী গ্রামে। তার বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের বসবাসও ছিল সেখানে। কাজের সূত্রে বরগুনার বেতাগী উপজেলায় এসে ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন সজলের বাবা অমল চন্দ্র কর্মকার। তবে সজলের চাচা এবং ভাই পটুয়াখালীতে ব্যবসা করেন। এর আগে সজলের বড় বোন সোনিয়া বেতাগী'র ঠিকানা ব্যবহার করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে চাকরিতে যোগ দেন। বেতাগীতে সজলদের বসবাস হলেও পটুয়াখালীতে নিয়মিত যোগাযোগ এবং আসা-যাওয়া রয়েছে তার পরিবারের সদস্যদের। 

পটুয়াখালীতে সজলের পরিবারের জমি থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে সদর উপজেলার লাউকাঠি ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আমিনুল ইসলাম বলেন, লাউকাঠি ইউনিয়নের ঢেউখালী গ্রামে সজলের পিতার ৬ শতাংশ ভিটি জমি রয়েছে। সে জমিতে তাদের গাছপালাও  প্রকৃতপক্ষে তারা ভূমিহীন নয়। তবে সজলের পরিবার কাজের সুবাদে বেতাগীতে বসবাস করে। 

জানা যায়, এ বছর ভূমিহীন হওয়ার কারণে পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগে সর্বপ্রথম জটিলতায় মুখে পড়েন বরিশালের আসপিয়া। তাকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে সজলের বিষয়টিও আলোচনায় আসে। পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরির ইন্টারভিউ দিয়ে সব পর্যায়ে সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও পুলিশ ভেরিফিকেশনে ভূমিহীন উল্লেখ করার কারণে চাকরি হচ্ছে না এ রকম একটি অভিযোগ সজল গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তুলে ধরলে সজলের বিষয়টি পুলিশ বিভাগের নজরে আসে। এরপর গত ২৮ ডিসেম্বর তাকে প্রশিক্ষনের জন্য ডাকা হয়।

সংবাদকর্মীদের কাছে সজল নিজেকে ভূমিহীন দাবি করে জানান, পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায় সবগুলো ধাপ উত্তীর্ণ হয়েও ভেরিফিকেশনে জাতীয় পরিচয়পত্রে দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী বেতাগীতে তার কোনো স্থায়ী ঠিকানা না পাওয়ায় তার নিয়োগ আটকে যায়। 

এ তথ্য ভেরিফিকেশনে যাওয়া বেতাগী থানা পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর হারুন অর-রশিদ বলেন, সরেজমিন তদন্তে পটুয়াখালীর সদর উপজেলায় সজলের পরিবারের জমি থাকার বিষয়টি উঠে আসে। আমি যেন তদন্ত রিপোর্টে পটুয়াখালীতে তাদের জমি থাকার বিষয়টি উল্লেখ না করি এবং স্থায়ী ঠিকানা বেতাগী লিখি এজন্য সজলের পরিবার স্থানীয় ইউনিয়ন আ.লীগ নেতা আসাদুজ্জামান রিপনকে দিয়ে বারবার আমাকে অনুরোধ করে। আমি তাহাতে রাজি না হওয়ায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান দ্বারা পটুয়াখালীতে বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে মর্মে ভূমিহীন সনদ দেন। আমি সেই তথ্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করি। আমি তদন্ত রিপোর্টে সত্য ঘটনা তুলে ধরে প্রতিবেদনে পটুয়াখালীতে সজলদের জমি ও ঠিকানা থাকার কথা উল্লেখ করি। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বিরুদ্ধে তদন্তে টাকা দাবির কথা অপপ্রচার করে। আমি যদি টাকা দাবি করতাম তাহলে সজলের তদন্ত রিপোর্ট দিতে দেরি করতাম। কিন্তু আমি সজলের কোনও ফাইল আটকাই নি। উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নির্দেশে সজল যথাসময়ে ট্রেনিং সেন্টারে যেতে পেরেছে। সে ট্রেনিংয়ে যাবার পর কেন এই অভিযোগ উঠবে।  পটুয়াখালীতে তাদের ভিটি জমির কথা উল্লেখ করায় ট্রেনিংয়ে যাবার পরে সজলের চাকরি থাকবে কিনা এই চিন্তায়  তার পরিবার আসাদুজ্জামান রিপন ও অনান্যদের দ্বারা সজলের চাকরি পাকা পোক্ত করার জন্য আমার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তুলে। 

পটুয়াখালীতে জমি থাকার বিষয়টি স্বীকার করে সজলের বাবা অমল চন্দ্র কর্মকার বলেন, পটুয়াখলীতে আমার পৈত্রিক কিছু জমি থাকলেও বরগুনায় আমি ভূমিহীন। আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ বেতাগীতে বসবাস করি। আমরা বেতাগী উপজেলার ভোটারও। 

বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মেহেদী হাসান সংবাদকর্মিদের বলেন, পুলিশে নিয়োগ পেতে হলে জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হয়। পটুয়াখালীতে সজলের চাচা ও বাবার কিছুটা জমি রয়েছে। সে যদি পটুয়াখালী জেলা থেকে আবেদন করত তবে সেটি ঠিক ছিল। তবে সজলের বিষয়টি পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে আসলে তার নিয়োগ জটিলতার অবসান হয়। বর্তমানে তিনি ট্রেনিংয়ে রয়েছেন।

 

প্রতিবেদক, বাংলাদেশ দর্পণ