সুশ্রুতের জন্ম হয়েছিল আনুমানিক ৬০০খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে। অর্থাৎ আজ থেকে ২৬০০+বছর আগে। তার সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানা যায় আইআইটি বারানসীতে। এখানে থাকা বহু পুস্তকে তার ব্যবহার করা বিভিন্ন টেকনিক সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে বিবরণ দেওয়া রয়েছে। সুশ্রুতের টেকনিক সম্পর্কে জানতে আপনাকে সবার আগে পড়তে হবে “সুশ্রুতা সংহীতা”। এই পুস্তক পড়লে কেউ বিশ্বাস করবে না সেই সময় এমন ধরনের সার্জারি কেউ করতে পারতো।

সুশ্রুতের সময়ে যখন সে নিজের প্রচেষ্টায় এমন কাজ বিশেষ করে নাক প্রতিস্থাপন শুরু করলো তখন মানুষের কাছে এটা কোনো বরদানের থেকে কম ছিল না। কারণ সেই সময়ে রাজারা শাস্তি হিসাবে প্রজাদের নাক কেটে দিত। তাই সুশ্রুত তখন সমস্ত মানুষের কাছে বড় আশার মানুষ হয়ে উঠেছিল। সুশ্রুত নাক প্রতিস্থাপন থেকে শুরু করে প্লাস্টিক সার্জারি, ব্রেন সার্জারি, দাঁত তোলা, মুত্রথলি সংক্রান্ত সার্জারি, হার্নিয়া সার্জারি, শরীরের একটি অংশ কেটে বাদ দেওয়া ছাড়াও আরও একাধিক সার্জারির কাজ করতে জানতো। তার ১৮৪ পাতার সুশ্রুতা সংহীতায় ১১২০টি রোগের বিবরণ সহ, ৭০০টি ঔষধের গাছ, ৬৪টি মিনারেল্স দিয়ে ঔষধ, পশুর অঙ্গ দিয়ে ৫৭টি কার্যকরী ঔষধের বিরণ রয়েছে। 

এতে ফ্র্যক্চার, হাড় প্রতিস্থাপন, ক্যটারেক সার্জারি, ব্রেইন সার্জারি ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদির সম্পর্কে বিবরণ রয়েছে। নাকের প্রতিস্থাপনের জন্য তিনি প্রথমে নাকের ক্ষতর উপর একটি পাতা রাখতেন। ক্ষতর সাইজে পাতা কেটে সেই পাতার সাইজের চামড়া গাল বা শরীরের অন্য অংশ থেকে কেটে নাকে লাগাতেন। তখন আধুনিক চিকিৎসার সরঞ্জামের প্রশ্নই ছিল না। তাই তিনি নিজের হাতে ১২১ টি সার্জারি টুল তৈরি করলেন। যার বিবরণ তার বইয়ে লেখা রয়েছে। আর এই যন্ত্রগুলির বিশেষত্ব এই ছিল যে এগুলি পরিবেশের থেকে অনুপ্রাণিত।  যেরকম ক্যাট বো যা বিড়ালের পাঞ্জার মত দেখতে। এই যন্ত্র আজও শরীরের চামড়া সড়িয়ে প্রয়োজনীয় অঙ্গে পৌছাতে আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যায় ব্যবহার করা হয়। এছাড়া অনেক যন্ত্রের আকার অনেক পাখির ঠোঁটের মত। বিজ্ঞান ও পরিবেশ কে একত্রিত করার যে সক্ষমতা তিনি দেখেছিলেন তা এককথায় অনন্য। 

চিকিৎসাবিদ সুশ্রুত তার সার্জারি সময় রোগীর যন্ত্রণা কমাতে একটি বিশেষ আয়ুর্বেদিক প্রক্রিয়ার সাহায্য নিতে যা অ্যানেসথেসিয়ার মতই কাজ করে। এগুলো সুশ্রুত নিজে চিহ্নিত করেছিল। তিনি খুব ভালোভাবে বুঝতে শুধু থিওরির জ্ঞান দিয়ে সার্জারি সম্ভব নয় প্র্যাকটিক্যাল অভিজ্ঞতা খুব বেশি ভাবে প্রয়োজন তাই তিনি বিভিন্ন ফলের খোসা কে মানুষের চামড়ার মত ব্যবহার করতেন এবং সার্জারি ট্রেনিং নিতেন এবং দিতেন। এক্ষেত্রে তিনি বেশি ব্যবহার করতেন তরমুজ। শুধু তাই নয় সেই সময় অনেক মৃত দেহকে নদীর জলে ভাসিয়ে দিত মানুষ। সুশ্রুত মৃতদেহগুলি কে সংগ্রহ করে নিজের ট্রেনিংয়ের জন্য ব্যবহার করত। এই ধরনের কাটাছেঁড়া কে ভালোভাবে নেয়নি সমাজের অনেক উচ্চ বৃত্তের মানুষরা যারা মনে করত সুশ্রুত ব্রাহ্মণ সত্ত্বেও নিচু ধর্মের মানুষের শরীর নিয়ে কাটাছেঁড়া করে। এই অবস্থায় সুশ্রুত লোকালয় থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন মাঠের মধ্যে নিজের কর্মকাণ্ড জারি রেখেছিল। পার্সিয়ার খলিফ আল মানসুদ এই সুশ্রুতা সংহীতাকে আরবি ভাষায় অনুবাদ করেন। যার নাম হয় “কিতাব আল-সুশ্রুতা”।

এরপর ১৭৯২সালে ইংরেজরা যখন টিপুসুলতানের সঙ্গে যুদ্ধ লড়েছিল যাকে আমরা যা মাইসুরের তৃতীয় যুদ্ধ নামে আমরা জানি, তখন টিপু সুলতান এক ইংরেজ বন্দির নাক কেটে দিয়েছিল। সেই সময় সুশ্রুতের এক শিষ্য সেই বন্দির মাথা থেকে চামড়া নিয়ে আবার তার নাক প্রতিস্থাপন করে দেয়। এই পুরো সার্জারি ব্রিটিশ সার্জেন্ট থমাস ক্রুজ ও জেম্স ফ্যন্লি পুরো জিনিসটা দেখে। এটা ১৭৯৪সালে “দ্যি জেন্টালম্যন্স ম্যগাজিন” ছাপিয়ে দেয়। তখন থেকে সারা বিশ্বে এই টেকনিক ছড়িয়ে পড়ে। আজও কত সার্জারি টেকনিক সুশ্রুতের থেকে এসেছে তা কল্পনার বাইরে। 
.