কথায় আছে "কিছু ঘটে তো কিছু রটে"। সত্য কখন চাপা থাকে না। সময় হলেই সে বেরিয়ে আসে সবার সামনে। ঘটনাটি আজ থেকে ৩০ বছর আগের ঘটনা অর্থাৎ ১৯৯০ সালের কথা।

নগরীর খানপুর সরদারপাড়া এলাকার চার জ্ঞাতি ভাই আফাজউদ্দিন সরদার, শাহাবুদ্দিন সরদার, মাহমুদ সরদার ও আবু সিদ্দিক পশ্চিম তল্লা এলাকায় নিজেদের আট শতাংশ জমি দান করেন মসজিদের জন্য। তবে জমিটি হিন্দু সম্পত্তি বলেও এলাকার কিছু মানুষের কাছ থেকে জানা গেছে। হিন্দু সম্পত্তি ভোগদখল করতে না পেরে সেই জমি মসজিদের জন্য দান করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

ওই জমিতে প্রথমে টিনের একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। ১০-১২ বছর আগে এটিকে পাকা দালানে পরিণত করা হয়। সর্বশেষ ছয়-সাত বছর আগে ওই মসজিদের প্রবেশপথের কিছুটা অংশ বাড়ানো হয় মুসল্লির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায়। মসজিদের সভাপতির (মোতোয়ালি) দায়িত্ব পালন করে আসছেন জমি দানকারীদের বংশধররা। ২০১৪ সাল পর্যন্ত মাহমুদ সরদার মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। তাই তার ভাগ্নে আবদুল গফুর মেম্বারকে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

আবদুল গফুরের কাছ থেকেই জানা গেল মসজিদ তৈরির ইতিবৃত্ত। তবে মসজিদটি ওয়াক্‌ফ করা কিনা এ বিষয়ে তিনি কিছু জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, জমিটি দান করা হয়েছে এই মর্মেও কোনো কাগজপত্র অবশ্য মসজিদ কমিটির কাছে রক্ষিত নেই। কমিটির নিয়মিত সভাও অনুষ্ঠিত হতো না। কোনো বিশেষ প্রয়োজনে পাঁচ-ছয় মাসে একবার সভা হতো। ১৭ সদস্যের এ কমিটির কোষাধ্যক্ষ জেলা প্রশাসনের কর্মচারী শামীম হাসান গত শুক্রবার মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত হয়েছেন।

আবদুল গফুর দাবি করেন- মসজিদের নিচ দিয়ে কোনো গ্যাসের সংযোগ বা পাইপ যায়নি। তবে মসজিদের দক্ষিণ ও উত্তর পাশ ঘেঁষে গ্যাসের সংযোগ লাইন বিভিন্ন বাসায় নেওয়া হয়েছে। এক থেকে দেড় মাস আগে গ্যাস লিকেজের বিষয়টি ধরা পড়ে। বিশেষ করে গত মাসে টানা বৃষ্টির ফলে মসজিদের ভেতরে পানি ঢুকে গেলে গ্যাসের বুদবুদ বের হতে দেখেন তারা। এর পরই মূলত তিতাস গ্যাস অফিসে গিয়ে কমিটির সাধারণ সম্পাদক হান্নান সাউদ এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়ে আসেন। তবে তিতাস গ্যাস অফিস থেকে এ কাজের জন্য ৫০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। মসজিদে গ্যাস সংযোগ না থাকলেও কেন কমিটি ওই ত্রুটি সারাতে তিতাস অফিসে গেছে- এ বিষয়ে আবদুল গফুর বলেন, যেহেতু এতে মসজিদের মুসল্লিদের সমস্যা হচ্ছিল এবং দুর্ঘটনা ঘটতে পারে- সে জন্যই কমিটি থেকে তিতাস গ্যাস অফিসে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু মসজিদ ফান্ডে এত টাকা না থাকায় আমরা কাজটি করাতে পারিনি।

আবদুল গফুর আরও জানান, মসজিদটি আট শতাংশ জমির ওপর নির্মিত হলেও কয়েক বছর আগে এর দক্ষিণ পাশে দেড় শতাংশ জমি কিনে সেখানে চারতলা নির্মাণ করা হয়। মসজিদ লাগোয়া ওই জমিতে নিচতলায় ওজু ও প্রস্রাবখানা এবং দোতলা থেকে চতুর্থ তলায় মেস নির্মাণ করে সেগুলো ভাড়া দেওয়া হয়েছে। সেখানে ১৪টি মেসকক্ষ থেকে মাসে ৩০ হাজার টাকা ভাড়া ওঠে। এ ছাড়া এলাকার শতাধিক বাড়ি থেকে রসিদের মাধ্যমে আরও আট থেকে ১০ হাজার টাকা ওঠানো হয়। এই অর্থ থেকেই ইমাম ও মুয়াজ্জিনের বেতন এবং বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা হয়।

সূত্র- সমকাল