প্রাচীন পুরাকীর্তির অন্যতম নিদর্শন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার পাইলগাঁও জমিদারবাড়ী। প্রায় সাড়ে ৫ একর ভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত তিন শত বছরেরও বেশী পুরানো এ জমিদার বাড়ীটি এ অঞ্চলের ইতিহাস-ঐতিহ্যের নিদর্শন ।

এ জমিদার পরিবারের শেষ জমিদার ব্রজেন্দ্র নারায়ণ চৌধু রী ছিলেন প্র খ্যাত শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ। তিনি ছিলেন সিলেট বিভাগের কংগ্রেস সভাপতি এবং আসাম আইন পরিষদের সদস্য। সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলায় জগন্নাথপুর উপজেলার অধীন ৯ নম্বার পাইলগাও ইউনিয়নের পাইলগাও গ্রামে ঐতিহ্যবাহি এ জমিদারীর অবস্থান। জমিদার বাড়ী দক্ষিণ দিকে সিলেটের কুশিয়ারা নদী বহমান।

প্রখ্যাত ঐতিহাসিক অচ্যূতচরণ চৌধুরী পাইলগাও জমিদার বংশের রসময় বা রাসমোহন চৌধুরী হতে প্রাপ্ত সূত্রেলিখেছেন যে; পাইলগাওয়ে বহুপূর্বকালে পাল বংশীয় লোক বসবাস করত। এ গোষ্টিয় পদ্মলোচন নামক ব্যক্তির এক কন্যার নাম ছিল রোহিণী। কোন এক কারণে রাঢ দেশের মঙ্গলকোট হতে আগত গৌতম গোত্রীয় কানাইলাল ধর রোহিণীকে বিবাহ করত গৃহ-জামাতা হয়ে এখানেই বসবাস শুরুকরেন। কানাইলাল ধরের আট পুরুষ পরে বালক দাস নামের এক ব্যক্তির উদ্ভব হয়। এ বালক দাস থেকে এ বংশ বিস্তৃত হয়। বালক দাসের কয়েক পুরুষ পর উমানন্দ ধর ওরফে বিনোদ রায় দিল-ীর মোহাম্মদ শাহ বাদশা কর্তৃ ক চৌধুরী সনদ প্রাপ্তহন। বিনোদ রায়ের মাধব রাম ও শ্রীরাম নামে দুই পুত্রের জন্মহয়। তার মধ্যেমাধব রামজনহিতকর কর্মপালনে নিজ গ্রাম পাইলগাঁও এ এক বিরাট দীঘি খনন করে সুনাম অর্জন করেন। তার দেয়া উক্তদীঘি আজও ঐ অঞ্চলে মাধব রামের তালাব হিসেবে পরিচিতহচ্ছে।

মাধব রামের দুই পুত্র মদনরাম ও মোহনরাম । উক্ত মোহনরামের ঘরে দুর্লভরাম, রামজীবন, হুলাসরাম ও যোগজীবন নামে চার পুত্রের জন্ম হয়। এই চার ভাই দশসনা বন্দোবস্তের সময় কিসমত আতুয়াজানের ১থেকে ৪ নং তালুকের যতাক্রমে বন্দোবস্তগ্রহন করে তালুকদার নাম ধারণ করে। এদের মধ্যে হুলাসরাম বানিয়াচং রাজ্যের দেওয়ানি কার্যালয়ে উচ্চ পদের কর্মচারীনিযুক্ত হন। হুলাসরাম চৌধুরী বানিয়াচং রাজ্যের রাজা দেওযান উমেদ রাজারঅনুগ্রহে আতুয়াজান পরগণায় কিছু ভূমি দান প্রাপ্তহন। হুলাসরামের প্রাপ্তভূমির কিছু কিছু চাষযোগ্যও কিছু ভূমি চাষ অযোগ্যছিল।

পরবর্তিতে হুলাসরাম চাষ অযোগ্য ভূমিগুলোকে চাষযোগ্যকরে তুললে এগুলোই এক বিরাট জমিদারীতে পরিণত হয়ে উঠে। হুলাস রামের ভাতুষ্পুত্রবিজয়নারায়ণের একমাত্রপুত্রব্র জনাথ চৌধুরীজমিদারি বর্ধিত করে এক প্রভাবশালী জমিদারে পরিণত হন। ব্রজনাথ চৌধুরীর দুইপুত্ররসময় ও সুখময় চৌধুরী। রসময় চৌধুরীর পুত্র ব্রজেন্দ্রনারায়নই ছিলেন এ বংশের শেষ জমিদার।

সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাংলাদেশদর্পন.কম