কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় অবৈধ টোল আদায়ের জেরে মারপিটের ঘটনা ঘটছে। এঘটনায় ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। যার মধ্যে পুলিশ ২ জনকে আটক করেছে।

উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের রামধন জুম্মাহাট এলাকার বাসিন্দা রাশেদুল ইসলাম গত ৩ বছর আগে একটি অটোরিকশা ক্রয় করেন। এরপর তিনি রিকশাটি নিয়ে রাস্তায় চলাচল শুরু করলে ‘বাংলাদেশ অটোবাইক শ্রমিক কল্যান সোসাইটি’ নামের ওই সংগঠনের সংঘবদ্ধ একটি চক্র তাদের সংগঠনের সদস্য অন্তর্ভুক্ত ও লাইসেন্স গ্রহনের জন্য চাপ দিতে থাকেন। এতে তিনি অপরাগতা প্রকাশ করলে চক্রটি নানাভাবে রাশেদুলকে ভয়ভীতি দেখান। একপর্যায়ে তাদের চাপের মুখে পড়ে অসহায় অটোচালক সংগঠনে অন্তভুক্তি ফি এককালীন ৫,২০০ টাকা দিতে বাধ্য হন। তাকে কোন রশিদ প্রদান করা হয়নি বলে জানান তিনি।

কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারো তারা রাশেদুলের কাছে নম্বর প্লেট প্রদানের নামে ১,০৫০ টাকা দাবী করে বসে। রোজগার কম থাকায় ওই সময় রাশেদুল তাদের দাবীকৃত টাকা দিতে না পারায় নেতারা তাকে একাধিকবার অফিসে ডেকে এনে জোরপূর্বক পকেট থেকে সারাদিনের আয়ের টাকা কেড়ে নেয় বলে তিনি জানান। এছাড়াও নম্বর প্লেট গ্রহন না করলে তাকে রাস্তায় গাড়ী চালাতে দেয়া হবে না বলে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয় সংগঠনের নেতারা। 

এরকম টানটান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে গত সোমবার (৩১আগষ্ট) বিকেলে রাশেদুল তার অটোরিকশায় যাত্রী নিয়ে উলিপুর পৌর শহরের গবার মোড়ে পৌঁছালে ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মুকুল মিয়াসহ সোহেল খাঁ, ফরহাদ হোসেন, সাইকেল মেকার মাজু মিয়া তার গাড়িটি আটক করে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করার পর অটোরিকশাটি অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। এ ঘটনা অটোরিকশা চালকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে অটোরিকশা চালকদের সহযোগীতায় রাশেদুল ঘটনার প্রতিকার চেয়ে পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংগঠনের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে উলিপুর থানায় একটি চাঁদাবাজীর মামলা করেন। পুলিশ গতকাল মঙ্গলবার ঘটনার সাথে জড়িত সোহেল খাঁ ও ফরহাদ হোসেনকে আটক করে জেল-হাজতে প্রেরণ করেন। তাদের আটকের খবরটি ছড়িয়ে পড়লে অসহায় অটোচালকদের মাঝে স্বস্থি ফিরে আসে। এদিকে, সংগঠনটি তাদের সকল প্রকার চাঁদাবাজীর কার্যক্রম বন্ধ করে অফিসে তালা দিয়ে সকলে গা ঢাকা দেন। দীর্ঘদিন ধরে উলিপুরে ‘বাংলাদেশ অটোবাইক শ্রমিক কল্যান সোসাইটি’ নামের সংগঠনের ব্যানারে একটি চক্র জোরপূর্বক ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা মালিকদেরকে সংগঠনের সদস্য অন্তর্ভুক্তি ও লাইসেন্স প্রদানের নামে চাঁদাবাজী করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন। এছাড়াও নিম্নবিত্ত্ব পরিবারের এসব অটোচালকরা গাড়ী নিয়ে রাস্তায় নামলেই তাদেরকে সংগঠনের টোল বাবদ ১০ টাকা দিতে বাধ্য করা হত।

উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনার সাথে জড়িত ২জনকে আটক করে জেল-হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

পলাশ সেন, নিজস্ব প্রতিনিধি | বাংলাদেশদর্পণ.কম