টানা পাঁচদিন অতি বৃষ্টির সাথে আমাবস্যার ভরা কাটালের টানে ফুলেফেঁপে ওঠা পানি লোকালয়ে প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে বাগেরহাটের বিভিন্ন স্থানে। এতে পানিবন্দি হয়েছে পড়েছে অর্ধশতাধিক গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার। পানিতে অনেকের রান্নাও বন্ধ রয়েছে। আবহাওয়া অফিসের আগাম সতর্কবার্তা না থাকায় হঠাৎ প্লাবনে দিশেহারা উপকূলের মানুষ।

প্রভাবশালীদের অতিলোভে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ভাগ্য বিড়ম্বনায় পড়ে সাধারণ মানুষ। জানা যায়, প্রভাবশালীরা অনেক এলাকায় প্রবাহমান খাল আটকে চিংড়ি চাষ করার কারণে পানি না নামতে পারায় পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন স্থানীরা।অবিরাম বৃষ্টির সাথে প্রতিদিনই জোয়ারের পানিতে দুই বার ডুবছে বাগেরহাট জেলা শহরের নিম্ন এলাকা ও বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ পৌরসভা এলাকাও।

বাগেরহাট সদর উপজেলার চরগ্রাম, মাঝিডাঙ্গা, ভদ্রপাড়াসহ অন্তত ৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মোরেলগঞ্জের নিশানবাড়িয়া, বহরবুনিয়া, জিউধরা ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম, পৌর শহর, ঢুলিগাতি, তেলিগাতি, সানকিভাঙ্গাসহ অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে জনগন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেসে গিয়েছে এসব এলাকার মৎস্য ঘের। অবিরাম বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে কচুয়া উপজেলার নরেন্দ্রপুর, ভান্ডারকোলা, পদ্মনগর গ্রামের কিছু আংশিক প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামেও ভেসেছে মৎস্য ঘের।

রামপাল উপজেলার ভোজপাতিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে কয়েকশ মৎস্য ঘের। পানিবন্দি রয়েছে দুই শতাধিক পরিবার। ফকিরহাট, চিতলমারী, মোল্লাহাট, মোংলা, ও শরণখোলা উপজেলায় অন্তত অর্ধ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সবজি ও মৎস্য ঘেরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পানিবন্দি অবস্থায় চরম বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষেরা।

রামপাল উপজেলার কুমলাই গ্রামের বাসিন্দা আবু সাঈদ মল্লিক বলেন, গত চার পাঁচ দিন ধরে জোয়ারের চাপে গ্রামের অনেক স্থানের রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে গিয়েছে। ঘরবাড়ি, মাছের ঘের, পুকুর ও গোয়াল ঘর ডুবে গেছে।

বাগেরহাট সদর উপজেলার চরগ্রাম গ্রামের নব্বই বছর বয়সী রাহিলা বেগম বলেন, পানিতে আমাদের ঘর আউলিয়ে গেছে। ঘরের মধ্যে পানি উঠেছে। রান্না করতে পারছেনা বউতে।খাওয়া-লাওয়াও বন্ধ। আলেয়া বেগ, সালমা বেগম, বিলকিস, মরিয়ম, আব্দুস ছালামসহ চরগ্রামেরে কয়েকজন বলেন, বৃষ্টি ও জোয়ারের পানির চাপে অনেকের কাঁচা ঘরের মাটি ধ্বসে পড়েছে।চার-পাঁচ দিনের পানি উঠেছে ঘরের মধ্যে। চুলো ডুবে যাওয়ায় অনেকে রান্না করতে পারছেন। বিশুদ্ধ পানির অভাবে গোসলও করতে পারছিনা আমরা। অনেকেই রান্না না করতে পেরে শুকনো খাবার খেয়ে জীবন বাচাচ্ছেন। গবাদি পশু-পাখি নিয়ে মারাত্মক বিপাকে রয়েছি আমরা।

তিনি আরও বলেন, গোয়াল ও খোপের ঘর ডুবে যাওয়ায় ঘরের মধ্যেও রাখতে হচ্ছে গরু ও হাসমুরগী। গোখাদ্যেরও সংকট তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় যত দ্রুত সম্ভব পানি অপসারণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার বহরবুনিয়া ইউনিয়নের ঘষিয়াখালী গ্রামের নুরুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান শেখ, মোঃ মাসুদ শিকদারসহ কয়েকজন বলেন, জোয়ারের পানিতে আমাদের ঘের, পুকুর, রাস্তা, বাড়ি, ঘর, গোয়ালঘর সবকিছু ডুবে গেছে। আসলে প্রত্যেকটি প্রাকৃতিক দূর্যোগেই আমাদের এভাবে ডুবতে হয়। কিন্তু এবারই প্রথম কোন বন্যা ও আগাম সতর্কতামূলক জলচ্ছাস ছাড়া জোয়ারের পানিতে আমরা ভাসলাম। আমাদের ইউনিয়নের চারপাশে বেশ কয়েকটি নদী ও খাল রয়েছে। কিন্তু এখানে কোন বেড়িবাঁধ নেই। যদি বেড়িবাঁধ থাকত তাহলে প্রতিনিয়ত আমাদের ডুবতে হত না।এছাড়া খাল আটকিয়ে ও চলাচলের রাস্তা কেটে চিংড়ি ঘের করেছেন কিছু কিছু প্রভাবশালীরা। এর ফলে আমাদের এলাকার জলাবদ্ধতা কয়েকগুন বেড়েছে।

রামপাল উপজেলার ভোজপাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ নুরুল আমিন বলেন, জোয়ারের পানিতে আমার ইউনিয়নের কয়েকশ মাছের ঘের ডুবে গেছে। প্রায় দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। পানি উঠেছে মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ভবনে। তবে স্থানীয় জন সাধারণ এসব ক্ষয়ক্ষতি বিভিন্ন দূর্ভোগের দাবি করলেও মৎস্য, কৃষি, জেলা প্রশাসনসসহ কোন দপ্তরই ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমান জানাতে পারেননি।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ বলেন, বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে বাগেরহাটের যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে সেখান থেকে পানি নিস্কাশনের জন্য স্থানীয় জন প্রতিনিধি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরুপন করা হবে বলে জানান তিনি।