বাংলাদেশে মাঝেমধ্যেই ইসলাম ধর্ম নিয়ে স্কুলশিক্ষকের কটূক্তির অভিযোগ ওঠে। গৎবাঁধা ছকে একই রকম ঘটনা একের পর এক ঘটতে দেখা গেছে। আর প্রত্যেকবারই এই কটূক্তির দুঃসাহস করেন কোনো না কোনো হিন্দু শিক্ষক। আবারও ইসলাম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দেওয়া হয়েছে বরিশালের গৌরনদীর এক বিজ্ঞান শিক্ষককে। কটূক্তির অভিযোগে ওই হিন্দু শিক্ষকের ফাঁসি দাবি করেছে স্থানীয় ক্ষুব্ধ মহল। 

বাংলাদেশে হিন্দুরা তাদের অস্তিত্ব নিয়ে শঙ্কিত বলেই দাবি করে সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন সংগঠন। এরকম পরিস্থিতিতে একজন হিন্দু শিক্ষক কী করে সংখ্যাগুরুদের ধর্ম ইসলাম নিয়ে ‘কটূক্তি’ করতে পারেন তা নিয়ে প্রশ্ন অনেকেরই।

বিদ্যালয়ে পাঠদানকালে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি ও ‘গরুর মাংস খাওয়া হারাম’ মন্তব্য করার অভিযোগে উজ্জ্বল কুমার রায় (৪৭) নামের এক সহকারী শিক্ষককে গণধোলাই দিয়ে গ্রামবাসী থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে।

গত রবিবার (৮ মার্চ) রাতে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মেদাকুল বাজারে এ গণধোলাইয়ে ঘটনা ঘটে। পরদিন সোমবারে অভিযুক্ত শিক্ষকের ‘ফাঁসি’র দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে গ্রামবাসী। 

এদিকে কটূক্তি করার অভিযোগে সহকারী শিক্ষক উজ্জ্বল কুমার রায়কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষক উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের মেদাকুল বিএমএস ইন্সটিটিউশনের সহকারী শিক্ষক ও সমরসিংহ গ্রামের প্রফুল্ল রায়ের পুত্র।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত শিক্ষক উজ্জ্বল কুমার রায় থানা হাজতে সাংবাদিকদের বলেন, একটি কুচক্রী মহল আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছে।

বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার, সাকিব মোল্লা, সৌরভ হাসান অভিযোগ করে বলেন, রবিবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে দশম শ্রেনীর ২য় ক্লাসে বিজ্ঞান পড়াতে আসেন সহকারী শিক্ষক উজ্জ্বল কুমার রায়। স্যারের বিজ্ঞান বিষয়ের ক্লাসে খাদ্যে আমিষ নিয়ে পাঠদানের সময় বলেন, ‘আলেম-ওলামাদের দিয়ে গরু কেটে মাংস খাওয়াটা ভণ্ডামি। কচ্ছপ খাওয়া উত্তম, গরু খাওয়া হারাম। হুজুররা অপদার্থ।’ 

ওই শিক্ষক পাঠদানের সময় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানায় অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মাঝেও তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

জানা গেছে, ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতকারী’ শিক্ষক উজ্জল কুমার রায় রবিবার রাতে মেদাকুল বাজারে এলে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী তার ওপর হামলা চালিয়ে তাকে গণধোলাই দেয়। খবর পেয়ে গৌরনদী থানা পুলিশ ওইদিন রাত ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

এদিকে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করার প্রতিবাদে অভিযুক্ত শিক্ষকের ‘ফাঁসির দাবিতে’ বিক্ষুব্ধ ২ শতাধিক গ্রামবাসী সোমবার মোদাকুল বাজার থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ইল্লা-বাকাই সড়ক ধরে বাকাই বাজারে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়।

তবে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের শাস্তি বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে কারাদণ্ড হয়ে থাকে। এর শাস্তি হিসেবে ‘ফাঁসি’ দাবি করা ‘ব্লাসফেমি’ আইনেরই নামান্তর এবং প্রচলিত আইনের রিরুদ্ধাচরণ বলে মনে করেন আইনজ্ঞগণ। 

এ ব্যাপারে গৌরনদী থানার ওসি গোলাম ছরোয়ার জানান, খবর পেয়ে রবিবার রাতে অভিযুক্ত শিক্ষককে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ওই শিক্ষককে ৫৪ ধারায় বরিশাল আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গৌরনদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রব হাওলাদার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বলে ওসি গোলাম ছরোয়ার জানিয়েছেন।

একজন সংখ্যালঘু হিন্দু কোন সাহসে ‘গরু খাওয়া হারাম। হুজুররা অপদার্থ।’-এ ধরণের কথা বলতে পারেন তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে সুধীমহলে। নাকি তাকে কোনো ব্যক্তিগত আক্রোশের পরিকল্পিত শিকার বানানো হয়েছে সেটাও ভাবছেন এলাকাবাসী। তবে বাস্তব ঘটনা নিশ্চিতভাবে জানা যাবে পুলিশের তদন্তের পরই।

এর আগেও বাংলাদেশের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের হিন্দু শিক্ষকদের ঠিক একই কৌশলে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এমতাবস্থায় হিন্দু শিক্ষকগণ পাঠদানকালে আরও সতর্ক ও শঙ্কিত থাকেন বলেই জানিয়েছেন অনেকে।