গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লী থেকে উচ্ছেদ হওয়া সাঁওতালরা আড়াই বছরেও বাপ-দাদার ভিটা ফিরে পানন। এমনকি তাদের পুনর্বাসনও করা হয়নি। অস্থায়ী অবাসেই মানবেতর জীবনযাপন করছে সাঁওতাল পরিবারগুলো। হামলার ঘটনায় হওয়া মামলার তদন্তে দৃশ্যমান অগ্রগতিও নেই। এখন পর্যন্ত মূল আসামিরা ধরাছোঁয়ারা বাইরে। তবে শিগগিরই চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হরে বলে জানিয়েছে পিবিআই’র কর্মকর্তা।

২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রংপুর চিনিকলের জমি দখলকে কেন্দ্র করে সাঁওতালদের বসতিতে হামলা-ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসময় পুলিশের গুলিতে তিন সাঁওতাল নিহত হন। উচ্ছেদ হওয়া সাঁওতাল পরিবাগুলো আশ্রয় নেয় মাদারপুর ও জয়পুরপাড়া গ্রামের খোলা আকাশের নিচে। সেখানে ঝুঁপড়ি ঘর করে দুই শতাধিক সাঁওতাল পরিবার। গত আড়াই বছর ধরেই তারা এভাবে আছে। 
অস্থায়ী বসতিতে সাঁওতালরাসরেজমিনে গেলে মাদারপুর ও জয়পুরপাড়ায় আশ্রয় নেওয়া সাঁওতালরা এ প্রতিবেদকের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

আমেনা হেমব্র বলেন, ‘ঘটনার দিন হামলা, আগুন থেকে কিছুই রক্ষা করতে পারিনি। প্রাণ নিয়ে কোনও রকমে এসে গাছতলায় আশ্রয় নেই। সেখানে ছোট টিনের ঘরে স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছি। আড়াই বছর ধরে নানা কষ্টের মধ্যে আছি এখানে। ঘটনার পর পুনর্বাসনের আশ্বাসসহ সরকারের পক্ষ থেকে যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তাও বাস্তবায়ন হয়নি। সুরহা হয়নি বাপ-দাদার সম্পত্তি ফেরতে পাওয়ার।’

অস্থায়ী বসতিতে সাঁওতালরামাদারপুর গির্জার সামনে আশ্রয় নেওয়া সাঁওতাল সরেন টুডু বলেন, ‘বসতঘর, জমি ও ফসলের অধিকার হারিয়ে সাঁওতালদের আশ্রয় হয় মাদারপুর, জয়পুরপাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামে। খোলা আকাশের নিচে ঝুঁপড়ি ঘরগুলোতে কোনও রকম মাথা গোজার ঠাঁই হলেও চরম অর্থকষ্টে দিন কাটছে সাঁওতাল পরিবারগুলোর। হামলায় আহত অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়ায় বিনা চিকিৎসায় দিন কাটছে।’

ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সহ-সভাপতি ফিলিমন বাস্কে বলেন, হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ তিনজনকে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটে। মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার, নির্যাতন ও হুমকির কারণে প্রতিনিয়ত আতঙ্কে থাকতে হয় সাঁওতাল পরিবারগুলোকে। কিন্তু আজও এসবের সুরহা হয়নি।

অস্থায়ী বসতিতে সাঁওতালরামামলার বাদী থমাস হেমব্রন বলেন, উচ্ছেদ, হামলা ও হত্যার ঘটনার সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ, ইউপি চেয়ারম্যান শাকিল আহমেদ বুলবুল, মিলের এমডি ও স্থানীয় প্রভাবশালীসহ ৩৩ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করি। কিন্তু মামলার অগ্রগতি নেই। ঘটনার আড়াই বছরেও মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ হয়নি। তাছাড়া জড়িত আসামিদেরও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ অবস্থায় বিচার কার্যক্রম নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

উচ্চ আদালতের নির্দেশে চাঞ্চল্যকর মামলাটির তদন্ত করছে পুলিশ বুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ বিষয়ে পিবিআই গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল লতিফ বলেন, ‘মামলায় এ পর্যন্ত ২৫ জনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। আসামিদের দেওয়া স্বীকারোক্তি জবানবন্দিতে উদ্ধার করা হয়েছে লুটপাট হওয়া ঢেউটিন, রিকশা, ভ্যান ও শ্যালোমেশিনসহ বিভিন্ন মালপত্র। ইতোমধ্যে মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ হয়েছে। আদালতে চার্জশিট দাখিলের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে।’ তবে আগামী মাসের মধ্যে আদালতে চার্জশিট দাখিলের আশ্বাস দেন তিনি। এ মামলার প্রকৃত অপরাধীদের কেউ ছাড় পাবে না বলেও জানান তিনি।

হামলায় আহত হয়ে পঙ্গু হয়েছেনগোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ বর্মন বলেন, ‘সাঁওতালদের পুনর্বাসনে দু’টি গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে গুচ্ছগ্রামে ৭০টি পরিবার বসবাস করছে। এছাড়া বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, শিক্ষা সুবিধাসহ ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতালদের সেলাই মেশিন বিতরণ এবং বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় সহায়তা করা হচ্ছে। তাদের পুনর্বাসনে আরও দুটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ কাজ চলছে।’

উৎস: বাংলা ট্রিবিউন

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৩ ঘণ্টা, ৩০ জুন ২০১৯