সন্তান হিসেবে বাবার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে আসেননি লিমা। তিনি এসেছেন অন্যায়ের বিচার চাইতে।

বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনের সংবাদ সম্মেলনে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী সুরেশ সরিষার তেলের কর্ণধার সুধীর সাহার একমাত্র মেয়ে লিমা সাহা একথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিমার স্বামী সৈকত পালসহ উপস্থিত ছিলেন পরিবারের সদস্যরাও।

সংবাদ সম্মেলনে লিমা সাহা বলেন, 'ভালোবেসে বিয়ে করা কি অপরাধ? স্বাধীনভাবে একটা সুখের স্বপ্ন দেখার অধিকার কি একটা মেয়ের নেই? এ সমাজে কি শান্তিপ্রিয় লোকদের বসবাস করার অধিকার থাকবে না? নিজের মতামতের মূল্য কেন এত চড়া দামে শোধ করতে হবে?'

একটু থেমে তিনি আরও বলেন, 'বাবার অমতে ভালোবেসে বিয়ে করায় বারবার মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। স্বামী ও আমার সংসারের সবার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়ে করা হচ্ছে বাড়িছাড়া। মিথ্যা মামলায় হয়রানি নয়, নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা চাই।'

লিমা জানান, কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ন্যায়বিচার চান তিনি। মিথ্যা মামলা, অপহরণ, হত্যার হুমকি ও হয়রানি করে কীভাবে তার বাবা সুধীর সাহা সমাজে স্বাভাবিকভাবে বসবাস করছেন! আইনের চোখে কি এসব অপরাধ নয়— প্রশ্ন করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য চেয়ে তিনি বলেন, 'স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসতে চাই। সবাইকে নিয়ে সুন্দর ভবিষ্যৎ তৈরির স্বপ্নে যেন ছেদ না পড়ে।'

লিমা প্রশ্ন তুলে বলেন, 'এ কেমন বাবা, যিনি তার মেয়ের জীবনকে বারবার মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছেন! মেয়েকে মানসিক রোগী বানিয়ে দিনের পর দিন রিহ্যাব সেন্টারে ভর্তি করে রাখেন! তিন-চার বছর ধরে সুধীর সাহাকে নানাভাবে বোঝানো হলেও সৈকতকে মেনে নেননি তিনি; বরং একজন বাবা হিসেবে মেয়ের সঙ্গে যা করেছেন, তা অবর্ণনীয়।'

লিমা সাহা জানান, তিনি ও তার স্বামী সৈকত— দু'জনেই প্রাপ্তবয়স্ক। দু'জন এরই মধ্যে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। সৈকত মেধাবী ছেলে। তবে তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি জানার পরই লিমার ওপর নেমে আসে ভয়াবহ নির্যাতন। প্রথমে টানা দুই বছর একটি অন্ধকার কক্ষে তাকে বন্দি করে রাখেন সুধীর সাহা। ওই সময় কারও সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। শর্ত দেওয়া হয়েছিল— সৈকতের সঙ্গে সম্পর্ক না ভাঙলে সূর্যের আলো পর্যন্ত দেখতে দেওয়া হবে না।

ওই দুই বছর কোনো পূজায় একটি জামাও কিনে দেওয়া হয়নি লিমাকে জানিয়ে তিনি বলেন, দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি সব পরিস্থিতি মোকাবেলা করেন। মনকে প্রবোধ দিয়েছেন তিনি— যাকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছি, তা একদিন পূরণ হবে। এরপর কলকাতায় নিয়ে তাকে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয় বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন লিমা।

তিনি জানান, কলকাতা বিমানবন্দরে পুলিশের সহায়তায় দেশে ফিরে চলতি বছরের ২৪ মে সৈকতকে বিয়ে করেন তিনি। হিন্দু রেজিস্ট্রি মূলে কোর্ট ম্যারিজ হলফনামায় স্বাক্ষর করে হিন্দু রীতি অনুযায়ী মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করেন তারা। এরপর সামাজিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তাকে সৈকতের কাছে তুলে দেওয়া হবে— এটা জানিয়ে লিমাকে তার মা-বাবার হেফাজতে নেওয়া হয়। তবে অনুষ্ঠান করার বদলে মানসিক রোগী সাজিয়ে ২৭ মে গুলশানের একটি রিহ্যাব সেন্টারে ভর্তি করানো হয় তাকে।

লিমা বলেন, এরই মধ্যে নরসিংদীর কয়েকজন পেশাদার অপরাধীকে ভাড়া করে সৈকতকে অপহরণের পর হত্যার ছক করেন সুধীর সাহা। স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের সহায়তায় অপহরণকারীরা হাতেনাতে ধরা পড়ে। ওই মামলায় সুধীর সাহাকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। তবে সেই মামলায় জামিন পেয়ে আবার চারটি মিথ্যা মামলা দিয়ে সৈকত ও তার পরিবারের লোকজনকে প্রতিনিয়ত হয়রানি করে যাচ্ছেন তিনি। এরই মধ্যে আদালত লিমার জবানবন্দি শুনে সৈকতের জিম্মায় হস্তান্তর করেন তাকে। তবে মিথ্যা মামলা দায়ের করায় তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছেন না বলেও অভিযোগ করেন লিমা।

তিনি জানান, সম্পদ ও অর্থের লোভে অনেকে ভুল বুঝিয়ে বিষিয়ে তুলছেন তার বাবার মন। কিছু কুচক্রী আত্মীয়স্বজন প্রতিনিয়ত প্ররোচনা জোগাচ্ছেন তাকে। সুধীর সাহার একগুঁয়েমি মনোভাব কাজে লাগাচ্ছেন তারা। 

সৈকতের মা ইতি পাল বলেন, শুধু টাকার জোরে একজন লোক তাদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছেন। জীবনের শঙ্কায় পরিবারের সব সদস্য নরসিংদীর গ্রামের বাড়ি ছেড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কোয়ার্টারে মেয়ের বাসায় এসে উঠেছেন।

লিমার স্বামী সৈকত পাল বলেন, 'ভালোবেসে বিয়ে করে এখন প্রতিনিয়ত জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছি। আমার পরিবারের সদস্যদের স্বাভাবিক চলাফেরা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত নানাভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। লোক ভাড়া করে অপহরণের চেষ্টাও করা হয়েছিল।'

নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিকুর রহমান বলেন, 'সুধীর সাহা কয়েকজন দাগি সন্ত্রাসীকে ভাড়া করে সৈকতকে অপহরণের চেষ্টা করেছে। তদন্তে এ পরিকল্পনায় তার জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে। শিগগিরই সুধীর সাহাসহ জড়িত অন্যদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হবে।'

লিমার বক্তব্যের ব্যাপারে মন্তব্য জানতে তার বাবা সুধীর সাহা ও মা লক্ষ্মী রানী সাহার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও নম্বর দু'টি বন্ধ পাওয়া যায়। খবর : সমকাল