দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে এবং করোনা মহামারির এই সঙ্কটকালে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্বেই থাকছেন কিশোর কুমার দাশ। তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন সহকর্মীরা। 

মঙ্গলবার (০৫ মে) সকালে কিশোর কুমার দাশের পদত্যাগের বিষয়টি বিদ্যানন্দের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই সারাদিন ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। অনেক সমালোচনা, হতাশা, ক্ষোভ ও মানুষের প্রত্যাশার মুখে এদিন বিকালেই কিশোর কুমার দাশ তার অবস্থান পরিষ্কার করে জানালেন, তার পদত্যাগপত্র এখনও গৃহীত হয়নি। তিনি বিদ্যানন্দের প্রধান পদেই আছেন।

কিশোর কুমার দাশ তার পোস্টে লেখেন-

আমার সিদ্ধান্তগুলোতে পাগলামি এবং আবেগের প্রভাব যুক্তির চেয়ে বেশি থাকে। ক্ষমা চাচ্ছি এই সীমাবদ্ধতার জন্য। আজকে আমার এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বেশ বিতর্ক তৈরি হয়েছে, সেটা নিয়ে আমার বক্তব্য প্রকাশ করলাম -

১/ আমি বিদ্যানন্দ ছাড়ছি না, পরিচালনা পর্ষদেই থাকছি। শুধু দায়িত্ব পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছি। পরিচালনা পর্ষদে এখনো সে আবেদন গ্রহণ করে নি।

২/ কোন চাপে এই সিদ্ধান্ত নেই নি আমি। শারীরিক ক্লান্তি এবং ব্যক্তিগত আবেগের কাছে হার মেনে এই সিদ্ধান্ত নেয়া।

৩/ সব ধর্মের মানুষের সহযোগিতায় এতদূর আসা। কিছু মন্দ লোক অপপ্রচার করে সেটা খুবই নগন্য।

যদি আমার আগের বক্তব্যে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে, আমি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা চাই। এবং অনুরোধ থাকবে, আমাদের পক্ষে লিখতে গিয়ে অনুমান ভিত্তিক অন্যকে দোষারোপ করবেন না।

কিশোর কুমার দাশ
স্বেচ্ছাসেবক প্রধান

দেশের এই সঙ্কটকালে নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য ত্রাণ নিয়ে পুরো শহরময় ছুটছে এর স্বেচ্ছাসেবীরা৷ সশস্ত্র বাহিনীসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলায়ও ত্রাণ পাঠাচ্ছে।

যখন চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক, নার্সদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের সংকট ছিল তখন বিদ্যানন্দ নিজেদের বাসন্তী গার্মেন্টসে পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) বানিয়েছে। সেই পিপিইগুলো বিনামূল্যে সরবরাহ করেছে ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে।

মসজিদ, হাসপাতাল, বাস, রেলস্টেশনের মতো জায়গাগুলো যেখানে জনসমাগম বেশি হয়, ভাইরাস সংক্রমণ ঘটাতে পারে, সেখানে জীবাণুনাশকও ছিটিয়েছে।

মানুষের হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করে দিতে রাজধানীর মিরপুর, ফার্মগেট, গুলশান, শাহবাগসহ বিভিন্ন স্থানে বসিয়েছে অস্থায়ী হাত ধোয়ার বেসিন। সরবরাহ করা হয়েছে পানি ও সাবান। তৈরি করেছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক; যা বিতরণ করা হয়েছে খেটে খাওয়া মানুষদেরকে৷

পুরো রমজান মাসজুড়ে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন বিভিন্ন এলাকায় দুস্থ পরিবারগুলোকে ইফতার ও সেহেরি দিচ্ছে।

মানবিক এমন কর্মকাণ্ডে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের প্রশংসা যখন দেশজুড়ে, তখন কিশোর কুমার দাশের পদত্যাগের খবর নিয়ে আলোচনা সৃষ্টি হয়।

মঙ্গলবার সকালে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ভেরিফাইড ফেইসবুক পেজে একটি ঘোষণায় বলা হয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির প্রধান পদ থেকে সরে গেছেন কিশোর কুমার দাশ। এটি গত মাসের সিদ্ধান্ত। তাদের ইচ্ছা ছিল করোনাসঙ্কট চলে গেলে তারপর ঘোষণা দেওয়া হবে। কিন্তু উদ্ভূত বিশেষ পরিস্থিতির কারণে এখনই ঘোষণা দেওয়া হলো।

ওই ঘোষণা দেখে ফেইসবুকে শুরু হয় সমালোচনা, তখন মঙ্গলবার বিকালে সুর পাল্টায় বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। 

এতে বলা হয়, “কোভিড-১৯ ক্যাম্পেইন ফোকাস রাখতে নির্বাহী কমিটির সদস্যরা কিশোর দাসের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি।

“কিশোর কুমার দাশ এখনও চেয়ারম্যান পদে আছেন এবং সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। যতদিন বিদ্যানন্দ থাকবে তিনি আমাদের প্রতিষ্ঠাতা এবং পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবেন।”

'পড়বো, খেলবো, শিখবো' স্লোগানকে ঘিরে গড়ে ওঠা বিদ্যানন্দের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রকল্প 'এক টাকার আহার'। ২০১৬ সালে এই প্রকল্পটি শুরু হয়। এক টাকার বিনিময়ে অসহায় পথশিশুরা এই খাবার পায়। পরে তাদের কর্মকাণ্ড আরও বিস্তৃত হয়।

বর্তমানে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, রাজশাহী, কক্সবাজারসহ মোট ১৩টি শাখা রয়েছে বিদ্যানন্দের। এছাড়া তাদের পাঁচটি স্কুলে একাডেমিক শিক্ষা পাচ্ছে এক হাজারেরও বেশি শিশু। তাদের ছয়টি অনাথ আশ্রমে রয়েছে ৪৫০ জনের বেশি শিশু।

সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় ২৫টির বেশি স্পটে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার শিশুর খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। এক টাকায় স্যানিটারি প্যাড, এক টাকায় চিকিৎসাসহ নানা রকম কর্মসূচির সুবিধা পাচ্ছে শত নারী ও শিশু।

আরও পড়ুন: ধর্মের কারণে পদত্যাগ করতে হলো ‘বিদ্যানন্দ’র প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাশকে