আমি কৃষ্ণ সুদর্শনধারী

স্বামী বেদানন্দ

 

আমি কৃষ্ণ সুদর্শনধারী!
নহি আমি বনমালী গোপীকা-রমণ,
নহি আমি রাধিকার মদনমোহন,
শিখি-পাখা-ধারী। 

অঘ-বক-কেশী-ব্যোম-কালীয়-দমন,
কংস-কুবলয়-মুষ্টি-চাণুর-মর্দ্দন,
শাল্ব-শিশুপাল-কালযবন-নিধন,
শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মধারী-আমি নারায়ণ! 

নহি আমি নন্দের নন্দন!
নহি আমি যশোদারঞ্জন!
নহি আমি নৃত্যশীল মুরলী-বদন!
আমাকে চিনিস নাই পাঞ্চজন্য-নাদে?
আমাকে হেরিস নাই গান্ডীবীর সাথে?
রাজসূয়-মহাযজ্ঞে লক্ষ নরপতি 
ভক্তি-অর্ঘ্যে পূজিলা আমায়,-
সেই স্মৃতি ডুবালি কোথায়?

আমি অদ্বিতীয়-
জ্ঞানে, ধর্মে, ত্যাগে, কর্মে, পূণ্যে, বীর্য্যে-
অতুলন আমি বিশ্বমাঝে!
তাই আমি রাজ-অধিরাজ!! 

আমি করি গোপিনীর বসন হরণ?
আমি করি রাধিকার চরণ ধারণ?
আমি করি রাসলীলা লম্পট ধরম?
আরে! আরে! হিন্দু-কুলাঙ্গার!
কৃষ্ণ-দ্রোহী ম্লেচ্ছ তুই-
অতি দুরাচার! 

শুনিসনি গীতা-কন্ঠে মোর মর্মবাণী?
“যুদ্ধ কর, যুদ্ধ কর, তুচ্ছ কর জয় পরাজয়!
চূর্ণ কর ক্লীবতা-দীনতা, 
বীরত্বেই মহত্ত্ব নিশ্চয়!
ওঠো জাগো জয় করো, করো যশ লাভ
শত্রু ধ্বংস করি করো সাম্রাজ্য-সম্ভোগ! 
-এই বজ্র বাণী মোর হারালি কোথায়? 

“পাপীর বিনাশ আর আশ্রিত উদ্ধার,
ধর্ম-সংস্থাপন তরে আসি বার বার;”
এই না আশ্বাসবাণী?
গোপীসনে কামলীলা কোথা এর মাঝে?
ইন্দ্রিয়-সম্ভোগ তরে লালায়িত যারা,
এই কথা তারই মুখে সাজে!! 

নিজ কাম-লালসার চিত্র কাব্যে আঁকি-
মোর নামে করিল প্রচার
ভাগবতে রাখিল গাঁথিয়া,
ধ্বংসপ্রায় হিন্দু জাতি সে পাপ সাধিয়া! 

আমাকে পূজিতে চাহ?
লও তবে অস্ত্র সুদর্শন!
আমাকে তুষিতে চাহ?
ধর তবে গাণ্ডীব ভীষণ! 

পূজার সঙ্কল্প মোর-
“শত্রু-বিমর্দ্দন, দিগ্বিজয়, সাম্রাজ্য-স্থাপন।”
এই পূজা করেছিল পাণ্ডব দুর্জ্জয়!
শ্রেষ্ঠ পূজা করেছিল পার্থ ধনঞ্জয়। 

নব যুগে নব বেশে আমি পুনর্বার
আনিয়াছি পাঞ্চজন্যে গম্ভীর হুঙ্কার-
গাণ্ডীব টঙ্কার! 

ঘুচাইয়া ক্লৈব্য-দৈন্য সঞ্চারি শকতি,
মিলনের সূত্রে কোটি কোটি নরে গাঁথি,
গড়িব এ হিন্দু-মহাজাতি!
জ্ঞানে ধর্ম্মে কর্ম্মে পুণ্যে পুনঃ ধরা মাঝে
জগতের গুরুরূপে লভিবেক খ্যাতি।। 

 

আরও পড়ুন: শ্রীকৃষ্ণের ঐতিহাসিকতা