ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে চলমান মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের ৬ষ্ঠ ধাপের প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি অনুমোদন করেছে। গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেকের বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের এই প্রকল্পের অনুমোদনের ফলে আগামী ২০২৫ সাল পর্যন্ত ৩৬৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে এ প্রকল্পে। সারা দেশে ৭ হাজার ৪০০টি মন্দিরভিত্তিক শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা হবে। এর মধ্যে ৫ হাজার টি প্রাক-প্রাথমিক, ১ হাজার ৪০০টি ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্র (বয়স্ক) এবং ১ হাজার ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্র (শিশু) প্রতিষ্ঠা করা হবে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব এনাম আহমেদ জানান, প্রকল্পের মেয়াদে ৫ হাজার প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্রের মাধ্যমে ৬ লাখ শিশুকে প্রাক-প্রাথমিক, ১ হাজার ৪০০টি ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্রের (বয়স্ক) মাধ্যমে ১ লাখ ৬৮ হাজার জন এবং ১০ বছর ঊর্ধ্ব বয়সি শিক্ষার্থীকে সাক্ষরজ্ঞানসহ ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা হবে। ১ হাজার ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্রের (শিশু) মাধ্যমে ১ লাখ ২০ হাজার জন ৬-১০ বছর বয়সি শিশুদের ধর্মীয় এবং নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা হবে। ৬৪টি জেলা ও ৪৯৫টি উপজেলায় এই কার্যক্রম পরিচালিত হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সবার জন্য শিক্ষা ও শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ ত্বরান্বিত, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার বৃদ্ধি, নৈতিকতার বিকাশ সাধন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বৃদ্ধি ও নারীর ক্ষমতায়ন ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব হবে।
প্রকল্পের আওতায় প্রতি শিক্ষাকেন্দ্রে একজন করে শিক্ষক (পুরুষ/মহিলা) নিয়োগ করা হবে এবং তাকে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা হারে সম্মানি প্রদান করা হবে এবং প্রতি বছর ২ মাসের সম্মানির সমপরিমাণ উৎসব ভাতা প্রদান করা হবে। প্রতি কেন্দ্রে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০ জন। সব শিক্ষার্থীর জন্য পাঠ্যবইসহ অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ (আমার বই, খাতা, এসো লিখতে শিখি ও সনাতন ধর্ম শিক্ষা) ইত্যাদি সরবরাহ করা হবে।

প্রকল্পের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চার জন কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রেষণে, ২৩৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী সরাসরি এবং ৮৮টি সেবা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ করা হবে। প্রকল্পে মোট জনবলের সংখ্যা ৩৩১ জন। প্রকল্প মেয়াদে ২৩৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ৭ হাজার ৪০০ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা হবে। ৬৪টি জেলা কার্যালয়ের মাধ্যমে ৬৪টি এবং প্রধান কার্যালয়ে তিনটিসহ সর্বমোট ৬৭টি কর্মশালা ও একটি সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ ও শিশুকে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানপূর্বক বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী করে প্রস্তুত করা এবং তাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করা ও শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধ করা এই প্রকল্পের মৌলিক উদ্দেশ্য। এই প্রকল্পে ৩২২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী, ৬ হাজার ৫৭৮ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কনটিনজেন্ট কর্মচারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্প্রীতিমূলক ও নৈতিক শিক্ষা জাগ্রত করে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা, মাদকমুক্ত, জঙ্গিমুক্ত জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ তৈরি হয়েছে।


প্রতিবেদক,বাংলাদেশ দর্পণ