নেত্রকোনা:কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে নেত্রকোনার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও বারহাট্টা

উপজেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।


এলাকাবাসী ও প্রশাসনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক দিন যাবত টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে নেত্রকোণার সীমান্তবর্তী উপজেলা দুর্গাপুর, কলমাকান্দা ও বারহাট্টার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে বন্যা দেখা দিয়েছে।


অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে অসংখ্য রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। অসংখ্য পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মৎস্যচাষীরা।


সবচেয়ে বেশী খারাপ অবস্থা কলমাকান্দা উপজেলা সদরসহ বড়খাপন,পোগলা, খারনৈ, লেঙ্গুরা ও রংছাতি ইউনিয়ন, দুর্গাপুর উপজেলা সদরসহ কুল্লাগড়া, গাওকান্দিয়া ও চন্ডীগড় ইউনিয়ন। ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ী ঢলে এ সকল ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের সাধারণ মানুষের বাড়িঘর, দোকানপাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তর বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।


গ্রামীর সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ও বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে যাওয়ায় দুই উপজেলার সঙ্গে বিভিন্ন ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পানি বন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক লক্ষাধিক মানুষ।


স্থানীয় প্রশাসন বন্যা দুর্গতদের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য দুই উপজেলার বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য খুলে দিয়েছে।


নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, টানা ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে নেত্রকোণার কংশ, মগড়া, সোমেশ্বরী, ধনু, উব্দাখালিসহ ছোট-বড় সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সোমেশ্বরী নদীর বিজয়পুর পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, দুর্গাপুর পয়েন্টে ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, উব্দাখালী নদী কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।


জেলাপ্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নেত্রকোণা জেলার ৬ টি উপজেলার ৩৯টি ইউনিয়ন পাহাড়িঢল ও অতিবৃষ্টিতে বন্যা কবলিত হয়েছে। সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার ৩৬ সেঃমিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কংশনদের বাঁধের একটি অংশে ফাটল দেখা দেয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে মেরামত করা হচ্ছে । প্রায় ৪৭৩ হেক্টর জমির আউশ ধান ও সবজি খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানিতে আটকে পড়া মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে।


এ পর্যন্ত বন্যাদুর্গত মানুষদের জন্য ১৮৮ টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তাতে প্রায় ১৬১৮০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।


পরবর্তীতে রান্না করা খাবার পরিবেশন করা হবে। এছাড়াও বন্যা কবলিত এলাকায় বিতরণের জন্য ৬৮ মেঃ টন চাল, ২,৫০,০০০ টাকা ও ২,০০০ প্যাকেট শুকনো খাবার উপ-বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।


বন্যা পরিস্হিতি পর্যালোচনার জন্য জেলা ও উপজেলায় কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে নেত্রকোনায় বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা ধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।


এরই মধ্যে বন্যা কবলিত প্রতিটি উপজেলায় ২০ মেট্রিক টন করে চাল ও নগদ আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে শুকনো খাবারসহ ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।



নয়ন বর্মন

নেত্রকোনা প্রতিবেদক

বাংলাদেশ দর্পণ