বাংলাদেশে অবস্থানরত ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিীর সদস্যদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ কিংবা জমি দখল রোধে সরকারের ভূমিকা ছিল অকার্যকর, বলছে যুক্তরাষ্ট্র।

বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে প্রকাশিত ২০২১ সালের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে এক পর্যালোচনায় এসব বিষয় উঠে এসেছে।


প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়ে বলা হয়েছে, 'হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ ও জমি দখল রোধে সরকার অকার্যকর ছিল। এদের অনেকে আবার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিীর সদস্য।'


এতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে উল্লেখ করা হলেও ধর্ম নিরপেক্ষতার নীতিকে সমর্থন করে। ধর্মীয় বৈষম্য নিষিদ্ধ এবং সব ধর্মের সমতার কথাও বলা রয়েছে। ধর্ম নিরপেক্ষ আদালতে বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর জন্য পৃথক পারিবারিক আইনের বিধান রয়েছে।


২০২১ সালের ১৩ থেকে ২৪ অক্টোবর দেশব্যাপী হিন্দুবিরোধী সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় মুসলিম ও হিন্দু ধর্মের বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছিলেন। এতে সরকার হামলার নিন্দা জানিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়কে সাহায্য এবং অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে। এ ঘটনায় ২০ হাজারেরও বেশি মানুষের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়। ওই বছর ধর্মীয় ইস্যুতে ৩টি 'হাই-প্রোফাইল' মামলার রায় হয়, যেখানে ২০১৫ সালে একজন প্রকাশককে হত্যার দায়ে ৮ জঙ্গিকে, একই বছর একজন নাস্তিক ব্লগারকে হত্যার দায়ে ৫ জনকে এবং ২০০০ সালে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের দায়ে নিষিদ্ধ ইসলামি গোষ্ঠীর ১৪ সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ এবং 'উসকানিমূলক' বার্তা দেওয়া বন্ধে মসজিদগুলোতে পর্যবেক্ষণ এবং সারা দেশের ইমামদের খুতবার বিষয়বস্তু সম্পর্কে নির্দেশিকা দিয়েছে সরকার; উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।


এতে আরও বলা হয়, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সদস্যরা, যাদের অনেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্য, তারা জানিয়েছেন—জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে জোরপূর্বক উচ্ছেদ ও জমি দখল রোধে সরকার অকার্যকর ছিল। এ ছাড়া সরকার ধর্মীয় স্থাপনা, উত্সব এবং সহিংসতার সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তুগুলোতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের মোতায়েন অব্যাহত রাখে।


যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম হাউসের মতে সেপ্টেম্বরে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সদস্যরা—বিশেষ করে হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, শিয়া ও আহমদিয়া মুসলিমসহ—তাদের উপাসনালগুলোতে সহিংসতা ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ ও হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশনের (এইচএএফ) তথ্য অনুসারে, জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক আক্রমণ সারা বছরই চলেছে।

অক্টোবরে একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্রে করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এর নিন্দা জানিয়ে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সহিংসা ও ভাঙচুরের ঘটনাকে অ-ইসলামিক বলে উল্লেখ করেন। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের পরিবারগুলোকে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে খাবার সরবরাহ করা হয়। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে সহয়তা প্রদান করে। তারা বাস্তুচ্যুতদের তাবুতে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়।


২৬ অক্টোবরের মধ্যে পুলিশ ৫৮৩ জন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করে। ২০ হাজার ৬১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। ১৭ অক্টোবর ইসলামবিরোধী বক্তব্য অনলাইনে প্রচার করার অভিযোগে কর্তৃপক্ষ এক হিন্দু যুবককে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের আওতায় আনে। রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় হামলার ওই ঘটনায় ২০ অক্টোবর সরকার জাতীয় মানবাধিকার কমিশন প্যানেল গঠনের ঘোষণা দেয়।

হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ কেউ বলেন, সরকারের নেওয়া সব উদ্যোগ সাম্প্রদায়িক সহিংসতা পরিস্থিতি প্রশমনে সহায়ক ছিল। তবে হিন্দু সম্প্রদায়ের সংগঠনগুলো এতে দ্বিমত পোষণ করেছে। তাদের মতে, সরকারের নেওয়া উদ্যোগ পর্যাপ্ত ছিল না।



সূত্র: দি ডেইলি স্টার