বিদেশ ডেস্ক : ভারতের হায়দরাবাদ, প্রাচীন এই শহরটির ব্যস্ত একটি সড়কে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে এক যুবক। তার ওপর রড ও ছুরি নিয়ে হামলা করছে কয়েকজন। যুবকের স্ত্রী হামলাকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। স্থানীয় সময় গত বুধবার সন্ধ্যায় হায়দরাবাদের রাস্তায় প্রকাশ্যে এমন ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। খবর এনডিটিভি।

নিহত যুবকের নাম বি নাগারাজু। তিনি একটি গাড়ি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। তার স্ত্রীর নাম আশরিন সুলতানা। ভালোবেসে তিন মাস আগে একে অপরকে বিয়ে করেন তারা। 

ভিন্ন ধর্মের এই দুই মানুষের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল ছোটবেলা থেকেই। দশম শ্রেণি থেকেই তারা একে অপরকে চিনতেন। এ সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি পরিবার। তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়েই বিয়ে করেছিলেন নাগারাজু ও সুলতানা।

পুলিশ বলছে, ওই দিন ২৫ বছর বয়সী যুবক নাগারাজুকে পিটিয়ে হত্যা করেছে তার স্ত্রীর ভাই ও স্বজনেরা।

পুলিশ বলছে, গতকাল রাত ৮টা ৪৫ মিনিটের দিকে ওই দম্পতি মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলেন। পথে দুজন ব্যক্তি তাদের থামিয়ে দেন। মোটরসাইকেল থেকে নাগারাজুকে নামিয়ে লোহার রড ও ছুরি দিয়ে আঘাত করতে থাকে।

নিরাপত্তা ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজে দেখা গেছে, দ্রুতই সেখানে মানুষের ভিড় জমে যায়। তবে কেউই হামলাকারীদের থামাতে এগিয়ে আসেননি। অনেককে তাদের মুঠোফোন বের করে এ ঘটনা রেকর্ড করতে দেখা গেছে।

ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, নাগারাজুর স্ত্রী সবার কাছে সাহায্য চাচ্ছিলেন। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, হামলাকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা করছেন সুলতানা। পরে প্রত্যক্ষদর্শীরা ওই হামলাকারীর দিকে ছুটে যান এবং তাকে মারতে থাকেন। ধাওয়া খেয়ে হামলাকারী পালিয়ে যান। 

পরে সুলতানা জানান, ওই হামলাকারী তারই ভাই। রাস্তার পাশেই মারা যান নাগারাজু। সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা মাঝ রাস্তায় আমার স্বামীকে মেরে ফেলেছে। আমার ভাইসহ পাঁচ ব্যক্তি হামলা চালিয়েছে। আমাদের সাহায্য করতে কেউ এগিয়ে আসেনি। আমি সবার কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। তারা আমার চোখের সামনে তাকে মেরে ফেলল।’

তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ যদি কোনো সাহায্যই না করতে পারে, তাহলে তাদের আসার কী দরকার ছিল? তারা শুধু তাকিয়ে দেখছিল। তাদের চোখের সামনে এমন ঘটনা ঘটছে, একজনকে মেরে ফেলা হচ্ছে, তারা কি তা দেখতে পায়নি?’

হামলাকারীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেলেও নিরাপত্তা ক্যামেরায় তারা ধরা পড়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা মুঠোফোনে ভিডিওগুলো রেকর্ড করেছেন। ভিডিও ফুটেজ দেখে চিহ্নিত হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে বিশেষ দল গঠন করেছে পুলিশ।

হিন্দু সম্প্রদায়ের নাগারাজু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের সুলতানা গত ৩১ জানুয়ারি আর্য সমাজ রীতিতে বিয়ে করেন। সুলতানা বলেন, বিয়ের আগে একবার নাগারাজু থেকে দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। 

কাঁদতে কাঁদতে সুলতানা সাংবাদিকদের আরও বলেন ‘আমি তাকে বলেছিলাম, তোমাকে যদি বিয়ে না করতে পারি, তাহলে আর কাউকেই বিয়ে করব না। তাকে বলেছিলাম, জীবন কিংবা মৃত্যু সবকিছু শুধু তোমাকে ঘিরেই।’ বিয়ের পর সুলতানার নাম হয় পল্লবী। তার পরিবার থেকে নাগারাজুকে হুমকি দেওয়া হয়।

নাগারাজুর বোন রমাদেবী এএনআইকে বলেন, ‘মেয়েটির পরিবারের কাছ থেকে হুমকি পাওয়ার পর আমরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলাম। পুলিশের অবহেলার কারণে আজ ভাইকে হারাতে হলো আমার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিল ও।’

এ হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে হায়দরাবাদের সারুরনগর এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) স্থানীয় কর্মীরা বিক্ষোভ করছেন।


প্রতিবেদক, বাংলাদেশ দর্পণ