কথিত ধর্ম অবমাননার দায়ে মামলায় কারাবন্দী মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার বিনোদপুর রাম কুমার উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও গণিতের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডল জামিন পেয়েছেন।


আজ রোববার দুপুর পৌনে ১ টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ ও দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারক মোতাহারাত আখতার ভুইয়ার আদালতে এই জামিন শুনানি শুরু হয়। 


পিনপতন নীরবতায় জামিনের পক্ষে যুক্তিতর্ক  তুলে ধরেছেন অভিযুক্ত শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডলের আইনজীবী শাহীন মোহাম্মদ আমানুল্লাহ। সরকার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন অ্যাডভোকেট পল্টু। 


হৃদয় মন্ডলকে গ্রেপ্তারের ১৯ দিনের মাথায় তৃতীয় দফায় এ জামিন শুনানি অনুষ্ঠিত হল।


গত মঙ্গলবার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন চেয়ে ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন হৃদয় মন্ডলের আইনজীবী হৃদয় মণ্ডলের আইনজীবী শাহিন মোহাম্মদ আমানুল্লাহ। সেদিন মামলাটিতে আসামির জামিন শুনানি ১০ এপ্রিল শুনানির জন্য ধার্য করেন আদালত।


এর আগে গত ২৩ ও ২৮ মার্চ আদালতে তার জামিন চাওয়া হয়েছিল। সে সময় আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছিলেন। 


ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগে হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে গত ২২ মার্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মো. আসাদ বাদী হয়ে মামলাটি করেন। ওই দিনই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।


মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান বলেন, মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে সম্মানের সঙ্গে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। 


তদন্তের বিষয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, মামলাটি স্পর্শকাতর। খুঁটিনাটি বিষয়ে গভীরভাবে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে কিছুই বলা যাচ্ছে না। তদন্ত প্রতিবেদন দিলেই প্রকৃত ঘটনা বলা যাবে।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা বিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রের সঙ্গে কথা বলেছি। এ ঘটনায় ধারণ করা অডিও, ভিডিও শুনেছি। সব মিলিয়ে নিবিড়ভাবে তদন্ত করা হচ্ছে।’


নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ঘটনা সম্পর্কে ওই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, ২০ মার্চ দশম শ্রেণির মানবিক শাখার বিজ্ঞানের ক্লাস নিচ্ছিলেন হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল। সেখানে বিজ্ঞান ও ধর্ম বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কয়েকজনের পক্ষে-বিপক্ষে কথোপকথন হয়। কোনো এক শিক্ষার্থী ওই কথোপকথনের ভিডিও ধারণ করেন। পরবর্তী সময়ে প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দীনকে বিষয়টি জানানো হয়। প্রধান শিক্ষক সেদিনই হৃদয় চন্দ্রকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন এবং শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকতে বলেন। 


তবে শিক্ষার্থীরা স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের বিষয়টি জানায়। এর পরের দিন সকালে তারা বিদ্যালয়ে এসে ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।


গত বৃহস্পতিবার হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের নিঃশর্ত মুক্তি চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। 


সংগঠনটির ৭২ শিক্ষক এক যৌথ বিবৃতিতে ওই দাবি জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের মতো একজন শিক্ষককে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত করা প্রয়োজন। সেখানে রাষ্ট্র তাঁকে কারাগারে বন্দী করে রেখেছে। এ ঘটনা আমাদের হতবাক করেছে। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন।’


এক বিবৃতির মাধ্যমে হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। একই সঙ্গে ষড়যন্ত্রকারীদের শাস্তির দাবি করেছে সংগঠনটি। 


বিবৃতিতে বলা হয়, মৌলবাদীদের ষড়যন্ত্রের শিকার শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছে নির্মূল কমিটি।


এ ছাড়াও গত বুধবার উদ্বেগ জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ১৮ বিশিষ্টজন। তাঁরা হৃদয় মণ্ডলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন।