ইউক্রেনে আটকে থাকা ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজের ২৮ নাবিক ও ক্রু রোমানিয়ায় পৌঁছেছেন। অলভিয়া বন্দরের কাছাকাছি একটি বাংকারে প্রায় ৩৯ ঘণ্টা কাটিয়ে রোমানিয়ার পৌঁছান তাঁরা। তবে তাদের সাঙ্গে নেই জাহাজে হামলায় নিহত হাদিসুর রহমানের মরদেহ।

শনিবার (৫ মার্চ) সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠান শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘২৮ নাবিককে রোমানিয়ায় নিয়ে এসেছি। শিগগিরই তারা বাংলাদেশে ফিরে আসবেন। ’

এর আগে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সভাপতি ক্যাপ্টেন মো. এনাম চৌধুরী বলেন, ‘ইউক্রেনে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের একটি সংস্থার সাহায্যে বাসে করে তারা ইউক্রেনের অলভিয়া পোর্ট থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে মলদোভার পথে যাত্রা শুরু করেছেন।

তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে নাবিকদের যোগাযোগ হয়েছে, তবে এ যাত্রায় হাদিসুর রহমানের মরদেহ আনা সম্ভব হচ্ছে না। তার মরদেহ বাংকারে ফ্রিজারে রাখা হয়েছে। ২৮ নাবিক-ক্রু নিরাপদে ফিরে এলে এরপর মরদেহ ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

তিনি বলেন, ‘পথে নানা ঝুঁকি আছে। তাদের যাত্রার আগে অগ্রবর্তী একটি রেকি টিম গেছে। তাদের সবুজসংকেত পেয়েই যাত্রা আরম্ভ হয়। অলভিয়া থেকে মলদোভা কাছাকাছি হওয়ায় সেদিকেই যাত্রা। কোনো কারণে ওই পথে সমস্যা হলে রোমানিয়াতেও যেতে পারে। সবাই ওদের জন্য দোয়া করবেন।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মো. সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, ‘সেখানে থাকা নাবিকদের সাথে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। উনারা জানিয়েছেন যে, উনারা রওনা হয়েছে।’

তবে বর্তমানে তাদের অবস্থান কোথায় সেটা জানাতে তিনি অপরাগতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তার জনিত কারণে তাদের অবস্থান ও তারা কোন পথে দেশে ফিরছেন সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারছি না। নাবিকরা বলেছেন, তাদের জন্য দোয়া করতে। উনার কোনো নিরাপদ গন্তব্যে পৌঁছালে আপনাদের জানাব।’

গত বুধবার ইউক্রেনের ভলিবিয়া বন্দরে আটকে থাকা বাংলাদেশি জাহাজে ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালায় রুশ সেনারা। এ ঘটনায় জাহাজের তৃতীয় ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান আরিফ নিহত হন। বাকি ২৮ নাবিক ও ক্রু অক্ষত থাকলেও তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে। এ অবস্থায় ঘটনার পর দিন তাদের উদ্ধার করে একটি শেল্টার হাউজে নিয়ে যাওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় জাহাজটিও পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর নাবিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয় পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধি ডেনিশ কোম্পানি ডেলটা করপোরেশনের অধীনে ভাড়ায় চলছিল। গত ২৬ জানুয়ারি মুম্বাই বন্দর থেকে রওনা হয়ে তুরস্কের ইরেগলিতে যায়। সেখান থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেইনের ওলভিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি জাহাজটি ওলভিয়া বন্দরের আউটার অ্যাংকরেজে ছিল, পরদিন ইনার অ্যাংকরেজে নিয়ে যাওয়া হয়। এই বন্দর থেকে সিমেন্ট ক্লে নিয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি ইতালির রেভেনা বন্দরের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা ছিল বাংলার সমৃদ্ধির। কিন্তু সেদিন সকালেই রাশিয়ার অভিযান শুরু হয় ইউক্রেনে।


প্রতিবেদক, বাংলাদেশ দর্পণ