প্রযুক্তির কল্যাণে ডিজিটাল পৃথিবীর ডিজিটাল নাগরিকদের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, হাতে একটা এন্ড্রয়েড ফোন আর নেটওয়ার্ক থাকলেই সমগ্র পৃথিবী তার হাতের মুঠোয়। আহা! কি অসীম স্বাধীনতা! যখন ইচ্ছে পছন্দের মানুষ ও প্রয়োজনীয় যেকোনো বিষয়কে খুঁজে নিতে পারে মুহূর্তেই। কথায় বলে-

'যাহা নেই ভূগোলে তাহা আছে গুগলে'।

পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে বসে একজন মানুষ নেটওয়ার্কের মধ্যে থেকে নিজেকে বিশ্ব নাগরিক ভাবতে পারেন। বিষয়টি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এই সুযোগে অনেক ডিজিটাল বখাটেও জন্মাচ্ছে। তারা ডিজিটাল স্বাধীনতা পেয়ে রাত-বিরাতে মানুষকে বিরক্ত করে। সময়-জ্ঞানশূন্য এই বখাটেগুলো ফেইসবুকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে অপেক্ষায় থাকে, একসেপ্ট করলে সাথে সাথেই শুরু...
১- কোথায় থাকেন?
২- কি করেন?
৩- আপনি ম্যারিড?
৪- বাসায় কে কে আছে?
৫- আপনি খুব সুন্দর!
৬- আপনার হাসি সুন্দর!

আরও কত কি!

শুধু তাই নয়, সকাল-সন্ধ্যা, মধ্যরাত, যখন ইচ্ছে ম্যাসেঞ্জারে বিনা অনুমতিতে কল দিতে থাকে। কল না ধরে কেটে  দিলেও তাদের বোধোদয় হয় না। অনবরত কল দিতেই থাকে। ওরা বুঝতেই শেখেনি ফেইসবুক বন্ধুকে ম্যাসেঞ্জারে কল দেওয়ার আগে এসএমএস দিয়ে অনুমতি চেয়ে নিতে হয়। এমনভাবে অধিকারবোধ দেখায়, যেনো যাকে কল দিচ্ছে, সে তার একান্ত অধিকার। যেনো কল ধরতে সে বাধ্য। ওরা জানে না, অচেনা কারো সাথে পরিচিত হতে হলে ভদ্রতা ও শালীনতা বজায় রেখে কথা বলার অনুমতি চাওয়া উচিৎ। সবারই এই সৌজন্যজ্ঞানটুকু থাকা উচিৎ।

ম্যাসেঞ্জারে কাকে কখন নক দেওয়া যায়, কিংবা কখন দেওয়া ঠিক নয়-এটা বোঝা উচিৎ। যখন-তখন, সকাল-সন্ধ্যা-মধ্যরাতে কাউকে নক দিলে, তিনি এটাকে ডিজিটাল ইভটিজিং হিসেবে ধরে নিতে পারেন। এটা যারা আজও বোঝে না, এইসব ডিজিটাল বখাটের পাল নিয়ে জাতি একদিন বিভৎস রকমের বিব্রত হবে। কারণ এরা তথাকথিত শিক্ষিতও বটে। নামকরা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী কিংবা শিক্ষক। তারা নিশ্চয়ই জানে, এই বিষয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে তবুও এইসব ডিজিটাল অপরাধীরা কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না।

আমার মনে হচ্ছে, সুশীল ডিজিটাল জাতি গড়ে তোলার জন্য ফেইসবুক ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত আচরণবিধি কেমন হওয়া উচিৎ, এই বিষয়ে পাঠ্য বইয়ে একটি চ্যাপ্টার রেখে ভালো করে সুশিক্ষক দিয়ে শেখানোটা এখন সময়ের দাবী।

তাহলে কিছুটা হলেও ডিজিটাল ইভটিজিং কমে আসবে। নয় তো প্রতি মুহুর্তে এইসব ডিজিটাল ইভটিজারদের অত্যাচারে জাতি নানাভাবে ভীষণ অতিষ্ঠ, বিড়ম্বিত ও বিব্রত হবে...!

লিখেছেন: কাজী মোহিনী ইসলাম