রাঙ্গুনিয়ায় হিন্দুদের দীর্ঘদিনের পুরাতন শ্মশান দখলের অভিযোগে বৌদ্ধ ভিক্ষুর বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে সনাতন সম্প্রদায়। উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের দশ মাইল মুক্তিযোদ্ধা বাজারে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। 

প্রতিবাদী হিন্দু সমাজ পদুয়া নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত মানবন্ধনে অংশ নিয়েছেন পদুয়ার ফলাহারিয়া হিন্দু পাড়া এলাকার কয়েক শতাধিক জনসাধারণ। সংগঠনের আহবায়ক হৃদয় দাশের সভাপতিত্ব বক্তব্য দেন প্রিয়তোষ কান্তি দে, রুবেল দে, অভি দাশ, জয় দাশ, পুলক চৌধুরী, মানিক দে, খোকন কান্তি দে, উজ্জ্বল দে, ঋষি রাম দে, নেপাল কান্তি দে, বিশ্বজিৎ দে, রিটন দে, শাবুল দে, স্বপন দে, বিমল দে, রাজু দে প্রমুখ।

মানববন্ধনে তারা অভিযোগ করে বলেন, পদুয়া ইউনিয়নের ফলাহারিয়ায় তাদের দীর্ঘদিনের পুরাতন শ্মশান জোরপূর্বক দখল ও ভাংচুর করা হয়েছে। এমনকি এক নারীর মৃত দেহ সৎকার করতে গেলে দীর্ঘ চার ঘন্টা তাদের লাশসহ অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। সম্প্রতি তাদের শ্মশানের মৃতদেহ রাখার ঘরসহ ৮টি শবঘর ভাংচুর করা হয়েছে। বাধা দিতে গেলে হিন্দু ধর্মালম্বীদের মারধর করাসহ প্রতিনিয়ত হুমকি ধমকি দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তারা। স্থানীয় জ্ঞানশরণ মহারণ্য বৌদ্ধ বিহারের ভান্তে শরণাংকর ভিক্ষুর ইন্ধনে ফলাহারিয়ার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কিছু চিহ্নিত জনসাধারণ এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ তাদের। এই অভিযোগে সম্প্রতি থানায় মামলাও দায়ের করেছেন তারা। মানববন্ধন থেকে তাদের শ্মশান দখলমুক্তের দাবী জানানো হয়। এছাড়া সনাতনী সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে শরণাংকর ভান্তেকে রাঙ্গুনিয়ায় অবাঞ্চিত ঘোষণা করে তাকে গ্রেপ্তারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানানো হয়।

এদিকে বৌদ্ধ ভিক্ষু শরণাংকর ভান্তের সনাতনী সম্প্রদায়ের শ্মশান দখল, সরকারি বনভূমি দখল, সাম্প্রদায়িক নানা উষ্কানির বিষয়ে পদুয়া ইউনিয়নের ফলাহারিয়া গ্রামে সরেজমিনে তদন্তে গিয়েছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন। এসময় চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম রশিদুল হক, সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনোয়ার হোসেন শামীম ও রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ বিভিন্ন স্তরের পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ সাথে ছিলেন। তিনি জ্ঞানশরণ মহারণ্যের নামে বনভূমি দখল, শ্মশান ভাংচুরের বিষয়টি খতিয়ে দেখেন এবং উপস্থিত স্থানীয় বৌদ্ধ ও হিন্দু জনসাধারণ, বৌদ্ধ ভিক্ষু, মুসলিম উম্মাহ ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ ও বন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেন।

বনভূমি অবৈধ দখলের সত্যতা পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারি বনভূমি কেউ পূর্ব অনুমতি ব্যতিত দখল ও ব্যবহারের এখতিয়ার নেই। এটা কোন ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান একাজ করলে তা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। জ্ঞাণশরণ মহারণ্য বৌদ্ধ বিহারে অবৈধভাবে বনভূমি দখলের সত্যতা পাওয়া গেছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে আরও দখল প্রক্রিয়া চালাতে মাটি খনন ও ইটও দেখা গেছে। এই ব্যাপারে ইতিপূর্বে বিভিন্ন মামলা দায়ের হয়েছে। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া পদুয়ায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। যেকোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ সবসময় তৎপর রয়েছে।