স্ত্রী স্বপ্নে ঈশ্বরের আদেশ পেয়েছেন, হাতি কিনলে তাঁদের মঙ্গল হবে। হাতি না কিনলে হয়ত অমঙ্গলও হতে পারে। অগত্যা কী আর করা! হাতি কিনলেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের দেউতির হাট রতিধর গ্রামের কৃষক দুলাল চন্দ্র রায়। এ জন্য ৭২ শতক জমি, বাড়ির কয়েকটি গাছ ও এক জোড়া গরু আর ৫৪ শতক জমি বন্ধকের টাকা যোগ করে মোট সাড়ে ১৬ লাখ টাকা দিয়ে কিনে ফেললেন হাতি।

এর আগেও নাকি দুলাল চন্দ্রের স্ত্রী তুলসী রানীর স্বপ্নাদেশ পূরণে রামছাগল, রাজহংস ও ঘোড়া কিনে লালনপালন করছেন। বোঝেন অবস্থা!

মঙ্গলকাব্যের যুগেও স্বপ্নে দেবী আদেশ দিতেন আর তারপর শুরু হতো গল্পের গরুকে গাছে চড়ানো। সেগুলো আবার কালের পরিক্রমায় কোনো কোনো গোষ্ঠীর নিকট ধর্মগ্রন্থ হিসেবে পাঠ্য হতেও দেখা গেছে। এখনো থাকবে হয়ত।

স্বপ্নে দেব-দেবতার আদেশ, ভর করা ইত্যাদি আগেও ছিল এখনো আছে। যশোর অঞ্চলের কোনো কোনো এলাকায় 'ভর করা' ব্যাপারটিকে কে বলে 'ঘাড়ে শয়াল আসা', 'শয়াল আসা', শয়াল ভর করা' ইত্যাদি। যে যাই বলুক না কেন জিনিস কিন্তু একটাই -- ভাউতাবাজি নইলে মানসিক রোগগ্রস্ত। এখনো ধর্মের দোহায় দিয়ে, ভাউতাবাজি করে অনেকেই ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেক কারণে চালাক মানুষেরা এরকম করে থাকে। নিজেকে আলাদা এবং গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উপস্থাপন, অর্থনৈতিক সংস্থান, কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধন ইত্যাদি। যার সবগুলোই ভাউতাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়।

দেব-দেবীর খেয়েদেয়ে কাজ নেই অমুকের(জনৈক) মায়ের ঘাড়ে এসে সমস্যার সমাধান করে দিবে। মানুষ এত বোকা হয় কী করে বুঝি না বাপু। আজকের এই বিজ্ঞান-প্রযুক্তির যুগে বাস করেও মানুষ কিভাবে পারে এসব আজগুবি ব্যাপারগুলো বিশ্বাস করতে! একশ্রেণির হিন্দুরা তো এগুলোকে আবার ধর্মের অঙ্গও মনে করেন! কালী মন্দিরে বসে নিজের ঘাড়ে/উপর মা কালীকে হাজির করে সব সমস্যার সমাধান বলে দেন, করে দেন। যেখানে সাধু-সন্ন্যাসীরা একটি বার মাকালীকে পাওয়ার জন্য, দর্শনের জন্য সমগ্রজীবন কাটিয়ে দেন সেখানে এরা মিনিটেই মা কালীকে ঘাড়ে উপস্থিত করেন। সেই সাথে আবার বাধ্য মেয়ের মত, কাজের মেয়ের মত কাজও করিয়ে নেন। আশ্চর্য হতে হয়, আশ্চর্য না হয়ে পারা যায় না!

আবার আপনার মোবাইল ফোনে/মেসেঞ্জার/হোয়াটসএ্যাপে মেসেজ আসবে, "ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত স্বপ্নে দেখেছেন, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আসছেন। এই মেসেজটি যদি আগামী ৭ দিনের মধ্যে ৩০ জনকে পাঠান তাহলে ভগবান আপনার মনোবাঞ্ছা পূরণ করে দেবেন। আর যদি না পাঠান তবে কোনোদিনও কোনো সুসংবাদ পাবেন না।" কেউ কেউ এসব মেসেজ পাওয়ার পর তাঁর গুরু দায়িত্ব পালন করতে মরিয়া হয়ে উঠছে। মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ছে চাপাবাজদের গভীর ষড়যন্ত্র। যে যেভাবে পারছে সেভাবেই ধর্মকে ব্যবহার করে, দেবতার দোহায় দিয়ে তার উদ্দেশ্য সাধন করে নিচ্ছে। আর জনগণও বোকা। সাধারণ মানুষের অন্ধ বিশ্বাসকে পুজি করে ব্যাবসা করে যাচ্ছে। মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। আর আজও এভাবে স্বপ্ন দেখতে দেখতে বেচারা হিন্দুরা চরম সংকটজনক দিন অতিবাহিত করছে। আজ তাঁদের দেবতার দেখানো বানানো স্বপ্ন তাঁদের পথের কাটা হয়ে পায়ে বিঁধছে।

লেখক : মিন্টু ভদ্র