এখনই এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবার পর শীর্ষ নেতাদের তিনি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাবেন। 

২১ সেপ্টেম্বর গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় প্রসঙ্গক্রমে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। 

বৈঠক সূত্র জানান, গতকাল বোর্ডে প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন সকল কিছুই স্বাভাবিক ভাবে চলছে তাই এইচএসসি পরীক্ষা হওয়া উচিত। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাককে লক্ষ্য করে বলেন, এখনই পরীক্ষা নিতে হবে কারণ কী? কলেজ তো চলছে না।  আমি সামগ্রিক চিন্তা করে কাজ করি। ইউরোপ-আমেরিকা, ভারতে এখন করোনার কী অবস্থা? ওরা ভেবেছিল কমে যাবে। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় আবার ধাক্কা দিচ্ছে। আমাদের দ্বিতীয় দফায় করোনা আসতে পারে। কাজেই এখনই এইচএসসি পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে না। যখন সময় হবে আমি বলে দেব। আর স্কুল কলেজও এখন খোলা যাবে না। সবকিছু ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

সভায় প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান করোনা নিয়ে সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে বলেন, এখন করোনা নিয়ে অনেক লেখালেখি হচ্ছে। কেউ কেউ বিভিন্ন মাধ্যমে সমালোচনা করছে। বিষয়টি কঠোরভাবে দেখতে হবে। জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সবাইকে মনে রাখতে হবে এখন আমরা একটা যুদ্ধকালীন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি। যারা সমালোচনা করেন, লেখালেখি করেন তাদের একটু ভেবে চিন্তে সমালোচনা করা উচিত।

বৈঠক সূত্র আরও জানায়, তৃণমূল থেকে পাঠানো তালিকায় জেলা-উপজেলা কিংবা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি-ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কেন তা জানতে চান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। তিনি এসব জায়গায় দ্রুত সম্মেলন করার তাগিদ দেন। একই সঙ্গে দলে যেন অনুপ্রবেশ না হয় সেজন্য সবাইকে সতর্ক করেন তিনি। করোনাকালে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তাদের মূল্যায়নের নির্দেশ দেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে বিভিন্ন উপকমিটি, সহযোগী সংগঠনের কমিটিগুলো দ্রুত যাচাই-বাছাই শেষ করে ঘোষণা করতে তাগিদ দেন দলীয় প্রধান।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় বোর্ডের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ, ড. আবদুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, ওবায়দুল কাদের, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ উপস্থিত ছিলেন।

বিকাল ৪টায় শুরু হয়ে সভা চলে সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিট পর্যন্ত।

মাস্ক পরে মসজিদে যাওয়ার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা মোকাবিলায় মুসল্লিদের মাস্ক পরে মসজিদে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি মাস্ক পরায় সচেতনতা বাড়াতে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, জোহর ও মাগরিব এ দুই ওয়াক্তের সময় যেন সব মুসল্লি মাস্ক পরে নামাজে আসেন তা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যান্য সময়ও মসজিদে নামাজ পড়ার সময় মাস্ক পরায় উৎসাহিত করতে হবে। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা থাকলেও মাস্ক পরতে জনসাধারণের অনীহা থাকায় যে কোনো সময় মার্কেট-শপিং মলে অভিযান চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ওয়েভ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা অংশ নেন।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অনেক দেশেই বিশেষ করে শীতপ্রধান দেশে দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন নভেম্বরের শেষ থেকে সেকেন্ড ওয়েভ আসে কিনা সে প্রিপারেশন রাখতে হবে। ম্যাসিভ প্রিপারেশন যেন থাকে। সরকারপ্রধানও করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ওয়েভ নিয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন আমাদের যেন প্রস্তুতি থাকে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন সেকেন্ড ওয়েভ যদি আসে আমাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে যদি সচেতন হই, তাহলে আমাদের জন্য এটা সুবিধা হবে। পাশাপাশি তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন অক্টোবরের শেষ বা নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ঠা-ার প্রকোপটা বাড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে আমাদের লোকজনের নিউমোনিয়া, সর্দি, জ্বর বা অ্যাজমাটিক সমস্যা থাকে, সবাইকে প্রস্তুতি নিতে বলেছেন।

এদিকে মন্ত্রিসভা বৈঠকে শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় খুলনা, আইন, ২০২০-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে চিকিৎসা ডিগ্রি (রহিতকরণ) আইন, ২০২০-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন আইন, ২০২০-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০২০ এর আগে ১৩ জুলাই মন্ত্রিসভা নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল। লেজিসলেটিভ বিভাগের মতামত পাওয়ার পর স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ থেকে এটা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আবার মন্ত্রিসভায় পাঠানো হলে আইনটির খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। তিনি বলেন, চিকিৎসা শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত বিশেষজ্ঞ গবেষক তৈরির লক্ষ্যে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে চিকিৎসা শিক্ষা ও গবেষণা এবং স্নাতক পর্যায়ে চিকিৎসা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মেডিকেল কলেজগুলোর শিক্ষার মান সংরক্ষণ ও উন্নয়নে খুলনা বিভাগে একটা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। এটা প্রতিষ্ঠিত হলে খুলনা অঞ্চলের মধ্যে যত মেডিকেল কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউট বা চিকিৎসাসংক্রান্ত অন্য যেসব ইনস্টিটিউট থাকবে সবই খুলনা শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলে আসবে।

তিনি জানান, এর আগে রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যে আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একই রকম আইন করা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, মন্ত্রিসভা ‘চিকিৎসা ডিগ্রি (দ্য মেডিকেল ডিগ্রিস) (রহিতকরণ) আইন, ২০২০-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। তিনি জানান, মেডিকেল কলেজের ডিগ্রি ও মান সবকিছু নির্ধারিত হতো ‘দ্য মেডিকেল ডিগ্রি অ্যাক্ট, ১৯১৬’ দিয়ে। পরবর্তী সময়ে ২০১০ সালে বিএমডিসি বা বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, ২০১০ করা হলো। ১৯১৬ সালের আইনের যত প্রভিশন ও মোডিফিকেশন প্রয়োজন ছিল সবই ২০১০-এর আইনে নিয়ে আসা হয়েছে। ফলে ‘দ্য মেডিকেল ডিগ্রিস অ্যাক্ট, ১৯১৬’-এর কোনো কার্যকারিতা নেই।