আজ সকাল দশটা। প্রাতঃরাশ করে ঘরে বসে আছি। হঠাৎ কলিং বেল৷ দরজা খুলে দেখি পাশের ফ্লাটের শান্ত। আমার পাশের ফ্লাটে ভাড়া থাকে ওরা৷ ও আর ওর স্ত্রী কঙ্কা থাকে। খুবই মিশুকে দুজন। আমার বেশকিছু কাজও করে দেয় ওরা৷ 

তো শান্ত বললো -কাকু, একটু গাড়ির চাবিটা দেবেন? আধঘন্টার মধ্যেই ফিরে আসবো৷ দিলাম। আধ ঘন্টার মধ্যেই ফিরেও এলো শান্ত। দু চোখ ভর্তি জল।

আমাকে জড়িয়ে ধরে থাকলো কিছুক্ষণ। তারপর চাবিটা দিয়ে চলে গেল। 

আমার কেন জানি খটকা লাগলো। গেলাম ওর পেছন পেছন। শুনি কাঁদতে কাঁদতেই কঙ্কাকে বলছে - রিপোর্ট পজিটিভ। 

কেমন যেন হয়ে গেলাম আমি! ভীষণ রাগ হচ্ছিল৷ ফ্লাটে ঢুকে বাথরুমে গিয়ে একটা পুরো ডেটল সাবান দিয়ে স্নান করলাম অনেকক্ষন ধরে৷ দরজা ধাক্কা দিয়ে বউ বললো - এতক্ষণ ধরে স্নান করছো কেন? জ্বর বাঁধাবে না কি? 

বেরোলাম জলের পাইপটা নিয়ে। এক বোতল ডেটল জল দিয়ে ধুলাম গাড়িটা। এত ভয় পেয়েছিলাম যে, আমার বাবার নামও ভুলে গিয়েছিলাম তখন। 

বাড়িতে ঢোকবার আগে শান্তদের বেল বাজালাম। শান্তকে বের হতে বললাম - তোমার কোন কান্ডজ্ঞান নেই? আমি সত্তর বছরের বুড়ো। তোমার কাকিমাও সিনিয়ার সিটিজেন, রিপোর্ট পজিটিভ জেনেও তুমি আমায় জড়িয়ে ধরলে?  

শান্ত হাসলো। বললো - ভুল বুঝেছেন কাকু, কঙ্কার প্রেগনেন্সি রিপোর্ট পজিটিভ৷ খবরটা ওকেই প্রথম দেব বলে আপনাকে তখন বলিনি। পরে গিয়ে দেখি আপনি নীচে। কাকিমাকে খবরটা দিয়ে এসেছি৷ 

আমি চিরদিন এমনই বলদা। নাম বিমোচন ঠাকুর হলে কী হবে?  কিছুই বিমোচিত করতে পারি নি আজ অবধি৷ আজকাল পজিটিভ শুনলেই মনে হয় করোনা৷ পজিটিভ যে আনন্দেরও হতে পারে তা প্রায় ভুলতেই বসেছি আমরা।

এখন শালা ঠান্ডা লেগে জ্বর না  আসে!

সাহিত্য কলাম | বাংলাদেশদর্পণ.কম