করোনা আসার আগে মাস্ক জিনিষটা ডাক্তারদের বাইরে কাউকে পরতে দেখেছি বলে মনে পড়ে না।
ও, হ্যাঁ। মনে পড়েছে। দুঃসময় শুরুর বেশ কিছুদিন আগে দিল্লিতে মাস্ক পরে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের প্রাকটিস করতে দেখেছি।সেটা বেশ অদ্ভুতই লেগেছিলো তখন। আর এখন? মাস্ক ছাড়া কাউকে দেখলে অদ্ভুত লাগে। ভয় লাগে।
মাস্ক শব্দটা ইংরেজি। এর বাংলা কী? বাংলা অর্থ মুখোশ, তবে বহুল প্রচলিত বাংলা ভার্সন হলো মাক্স। মাস্কের চেয়ে মাক্স বলেই  কোন এক অদ্ভুত কারণে লোকে শান্তি পায়।
যেমন বহুলোকে শান্তি পায় কথা বলার সময় মাস্কটা মুখ থেকে নামিয়ে। কেউ কেউ আবার নাকটা খালি রেখেই খুব যত্ন করে মাস্ক পড়ে!
করোনা ভাইরাস ঠেকাতে সারাবিশ্বে সবার মুখে উঠেছে মাস্ক। তবে, সবার মাস্ক সমান না।
কারোটা গেঞ্জি কাপড়ের,কেউ বানাচ্ছে টিস্যুপেপার দিয়ে, কারোটা সার্জিক্যাল, কেউ কিনেছে এন নাইন্টি ফাইভ কিংবা এফ এফ পি টু। তবে, সবার মাস্ক সমান না হলেও মাস্ক কেনায় সবাই সমানে সমান। হুমড়ি খেয়ে অনলাইনে-অফলাইনে কিনেই চলেছেন মাস্ক। তবে, সাশ্রয়ী আমরা এগুলো একবার ব্যবহার করে ফেলে দিচ্ছি না। বারান্দার কাপড় শুকানোর জগতের নতুন অতিথি হিসেবে জায়গা দখল করেছে মাস্ক। প্রত্যেক বাসাতেই একটা-দুটো ঝুলতেই থাকে ইদানিং।
মাস্ক নিয়ে গত পরশু দিনের একটা ঘটনা বলি। বিকেলে বেশ হইচই শুনে বারান্দার কাছে যেয়ে উঁকি দিতেই দেখি মাস্ক পড়া কয়েকজন যুবক মারামারি করছে। এর মধ্যে মার খেয়ে একজনের মাস্ক খুলে এক কানে ঝুলছে, সে প্রাণপণে চেষ্টা করছে সেটাকে আবার মুখে পড়তে। শেষ পর্যন্ত সে মাস্কটা পড়তে পেরেছিলো কি না জানতে পারি নি; মোবাইলে একটা কল এসেছিলো তখন।
মাস্ক জিনিষটাকে অনেকটা আমরা আইডি কার্ড পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছি। অফিসের এক সহকর্মীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, মাস্ক নেই কেন?
সে পকেট থেকে যত্নে ভাঁজ করা একটা মাস্ক বের করে বলেছিলো, আছে তো স্যার। একটু পর পর মুখে বান্ধি।
তার মানে আইডি কার্ডের মতো মাস্ক থাকলেই হলো!
অনেকে কলম, লাইটারের মতো মাস্কও ভুলে রেখে এসে পড়েন বিভিন্ন জায়গায়, তারপর খুঁজতে খুঁজতে না পেয়ে একসময় মনের দুঃখে মাস্ক পড়াই বাদ দিয়ে দেন।
শরীরে কিছু একটা পরার মতো হলেই হলো। সেটার মধ্যে ডিজাইন চলে আসতেই হবে কিছুদিনের মধ্যে।মাস্কের বেলাতেও তাই। ডিজাইনার মাস্ক এসে গেছে অলরেডি।কয়েকটা তো দেখলাম ওয়েডিং ডিজাইন!
আমার এক কাজিনের অদ্ভুত কাহিনী বলি। কোভিড আসার আগে সে সবসময় মাস্ক পড়ে থাকতো। গেমের কোন এক চরিত্রের অণুকরণে। তখন নিষেধ করেও তাকে মাস্ক খোলানো যায় নি, আর এখন? জোর করেও মাস্ক পড়ানো যায় না।
কিছু "সহৃদয়" ব্যক্তি আবার ব্যবহৃত মাস্ক ফেলে দিয়ে অপচয় করতে চান না! তারা ওগুলো ধুয়ে, ইস্ত্রি করে আবার বিক্রির "মহান" কুকর্ম করে ইতোমধ্যেই জেলের ঘানি টানছেন। এদের কথা আর না বলি।
মাস্কময় এই চারিদিকে মানুষগুলোর চেহারাই ভুলতে বসেছি। একই ধরনের মাস্ক পরা সবাইকে একরকম লাগে। কবে আবার আসল চেহারায়, নিরাপদে নিঃশ্বাস নিতে দেখবো চারপাশের মানুষগুলোকে?
 এ প্রশ্নের উত্তর জানি না বলেই শেষ করার সময় এসেছে।সতর্ক থাকুন। সঠিক নিয়ম মেনে মাস্ক পরুন।একটু অসতর্ক হলেই  মানুষের  ব্যবহৃত মাস্কটি রয়ে যাবে, হয়তো মানুষটা থাকবে না এই জগতে...

লেখক:

মনদীপ ঘরাই, সিনিয়র সহকারী সচিব।