সন্তানের কষ্ট মায়ের বুকে বাজে। মা কাঁদে। মায়ের চোখে অশ্রু ঝরে মমতার অশ্রু এবং বেদনার অশ্রু। মা তাঁর সকল কষ্ট সহ্য করে সন্তানের মুখে হাসি ফোঁটায়। এবারও তাঁর ব্যতিক্রম নয়, কষ্ট করে ব্যাগ এবং ব্যাগের উপরে অঘোরে ঘুমনো সন্তানকে নিয়ে গন্তব্যের দিকে এগিয়ে চলেছেন ক্লান্ত মা। 

মা-বাবা হাঁটছেন। তাই কষ্ট করে হলেও তাঁদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যাচ্ছিল খুদে দু’টি পা। পাঞ্জাব থেকে উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসি তো আর কম দূরত্ব নয়। প্রায় ৮০০ কিলোমিটার। বড়রা ক্লান্ত হচ্ছে। কিন্তু তাঁরা জানেন পথের ক্লান্তিকে দূরে সরিয়ে হাঁটাই যে ভবিতব্য! তবে ছোট্ট দু’টো পা এখনও শেখেনি সে সব। সমস্ত পরিস্থিতির সঙ্গেই যে তাকে খুব কষ্ট করে খাপ খাইয়ে নিতে হবে তা জানে না খুদে। তাই তো বেমালুম ট্রলি ব্যাগের উপরে উঠেই ঘুমিয়ে পড়ে সে অনায়াসে। কষ্ট করে ব্যাগ এবং ব্যাগের উপরে অঘোরে ঘুমনো সন্তানকে নিয়ে গন্তব্যের দিকে এগিয়ে চলেছেন ক্লান্ত মা। উত্তরপ্রদেশের আগ্রার এই ছবিই যেন আরও একবার পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার কথা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।

জানা গিয়েছে, তাঁরা ঝাঁসির বাসিন্দা। স্ত্রী, সন্তানকে নিয়ে শ্রমিকের কাজ করতে গিয়েছিলেন ওই খুদের বাবা। তবে লকডাউনে নিজেদের পাশাপাশি খুদের মুখেও দু’মুঠো অন্ন তুলে দিতে পারেননি তিনি। কপালে জোটেনি শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনের টিকিট। তাই বাধ্য হয়ে সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন তাঁরা। বাবা-মার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাইলের পর মাইল পথ হাঁটতে হয়েছে খুদেকে। খাবার নেই আবার তার উপর হাঁটার পরিশ্রম। বারবার খাবার আর একটু বিশ্রামের জন্য কান্নাকাটি জুড়েছে ছেলে। কিন্তু কোনওটারই বন্দোবস্ত করে দিতে পারেননি অসহায় বাবা-মা।

তাই তো বাধ্য হয়ে নিজের ব্যবস্থা নিজেই করে নিয়েছে একরত্তি। ট্রলি ব্যাগের উপর মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছে সে। মাও প্রচণ্ড ক্লান্ত। বয়সে বড় তাই তো খুদের মতো কারও কাছে কান্নাকাটি করারও সুযোগ পাননি মা। কিন্তু ক্লান্ত শরীরে ব্যাগ এবং ব্যাগের উপরে অঘোরে ঘুমনো ছেলেকে টেনে নিয়ে যাওয়ারও ক্ষমতা যেন নেই তাঁর। প্রায় বাধ্য হয়েই কোনওক্রমে হেঁটে চলেছেন তিনি। কোনও কথা বলারও ক্ষমতা নেই তাঁর।