শ্বাসরুদ্ধ করা এক বিদ্যা হলো জাদুবিদ্যা। মানুষকে দ্বিখণ্ডিত করা, পানির ওপরে হাঁটা, বাতাসে ভেসে বেড়ানো এরকম স্নায়ুতে কড়া নাড়ানোর মত বিদ্যা হলো জাদুবিদ্যা। এমন শ্বাসরুদ্ধকর খেলা দেখিয়ে দুনিয়া মাতিয়েছিলেন বাংলাদেশের বিখ্যাত জাদুকর পিসি সরকার।

জাদুশিল্পের মাধ্যমে তিনি বিশ্বের বুকে বাংলা ও বাঙালিকে গৌরবোজ্জ্বল জাতি হিসেবে পরিচিত করেছিলেন। বিশ্ব কাঁপানো এমন এক জাদুকর পিসি সরকারের বিখ্যাত হওয়ার কাহিনী নিয়েই আজকের আয়োজন।

SUN SHINE Led Light - 141 Photos - Product/Service - tuhin road ...

মানুষ কেটে দ্বিখণ্ডিত করছেন জাদুকর পি সি  সরকার

জাদুশিল্পী পিসি সরকারের কৃতিত্ব হলো- তিনি বহু প্রাচীন জাদুর মূল সূত্র আবিষ্কার করেন। করাত দিয়ে মানুষ দ্বিখন্ডিত করার খেলাটি দেখে দর্শকরা অভিভূত হয়ে পড়েন। এমন শ্বাসরুদ্ধকর জাদুতে অনেকেই অজ্ঞান হয়ে যেতেন। সেই সময় দ্বিখন্ডিত তরুণীর কুশল বার্তা জানার জন্য বিবিসি অফিসে এতো টেলিফোন আসতে থাকে যে, ২ ঘন্টা পর্যন্ত অফিসের সকল টেলিফোন লাইন ব্যস্ত ছিল।

নিউওয়ার্ক টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ খেলাটি দেখার জন্য তাকে বিশেষ বিমানে করে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্রে তিনি অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা ও সম্মান লাভ করেন। ওয়াটার অফ ইন্ডিয়া তার আরেকটি জনপ্রিয় খেলা। ১৯৩৪ সালে সর্বপ্রথম তিনি বিদেশ গমন করেন এবং ৭০টির মত দেশে জাদু প্রদর্শন করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান।

ফোর্স রাইটিং খেলাটি ভারতের মহা আলোড়ন সৃষ্টি করেন। তারপর বিদেশে একটি দ্রুতগামী রেলগাড়ি আসার মাত্র ৩৮ সেকেন্ডে আগেই হাতকড়া বন্ধ অবস্থায় ট্রেন লাইন থেকে মুক্ত হয়ে আসেন। এই হাতকড়াটি খুলতে ১৭টি চাবি ব্যবহার করা হতো।

তার জাদু অস্ট্রেলিয়ার টেলিভিশন, বিবিসি, শিকাগো ডারলিউ জিএনটিভি নিউওয়ার্কের এনবিসি ও সিবিএস টেলিভিশনে বহুবার প্রদর্শন হয়েছে।

পি সি সরকারের পুরো নাম প্রতুল চন্দ্র সরকার। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাঙ্গালী জাদুকরদের মধ্যে পিসি সরকার অন্যতম। ১৯১৩ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার আশিকপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আর শিক্ষাজীবন কাটেনি স্থানীয় শিবনাথ হাইস্কুলে। বাবার নাম ভগবানচন্দ্র সরকার, মা কুসুম কামিনী দাস। পিসি সরকারা ছিলেন দুই ভাই। পিসি সরকার ছিলেন বড় আর ছোট ভাই অতুল চন্দ্র সরকার বা এসি সরকার। ছেলেবেলা থেকে জাদুবিদ্যার প্রতি তার আগ্রহ ছিল। আবার জাদুবিদ্যায় বংশগত ঐতিহ্য রয়েছে পিসি সরকারের। তখনকার খ্যাতিমান জাদুকর গণপতি চক্রবর্তী তার যাদুবিদ্যার গুরু ছিলেন। ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় তিনি যাদু দেখানো শুরু করে। তাতে লেখাপড়ার বাধাগ্রস্ত হয়নি। ১৯২৯ সালে প্রবেশিকা এবং ১৯৩৩ সালে গণিত শাস্ত্রে অনার্সসহ বিএ পাশ করেন এবং জাদুকেই পেশা হিসাবে গ্রহন করেন তিনি।

১৯৭০ সালে ১৩ জানুয়ারি পিসি সরকার জাপানে জিগেৎসু শহরে জাদু প্রদর্শন করতে গিয়ে আকম্মাৎ মারা যান।