প্রকৃত অর্থে কাজের কাজ কিছু না করেও কেবল যোগাযোগ ও কৌশল কাজে লাগিয়ে আত্ম-প্রচারকারী ব্যক্তিরা অফিসে বড় কর্তাদের চোখে ভালো কর্মী হিসেবে বিবেচিত হন।

অফিসের কিছু কিছু কর্মী আছে যারা অফিসের কাজ না করে কে কী করছে তা নিয়েই বেশি মেতে থাকেন। অফিসের কাজে তাদের বিশেষ মনোযোগ থাকে না।

কিন্তু এরপরও তারা বসের কাছে ভালো থাকেন। কারণ অফিসিয়াল মিটিংগুলোতে তারা সামনের সারিতে বসে কর্তা ব্যক্তিদের কথায় সমর্থন জুগিয়ে বা প্রশংসা করে তাদের চোখে পড়েন।

এই ধরনের ব্যক্তিদেরকে 'সেল্ফ-প্রমোটার' বা 'আত্ম-প্রচারকারী' বলে উল্লেখ করেছে যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণা বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।

গবেষণাটি বলছে, প্রকৃতার্থে কাজের কাজ কিছু না করেও কেবল যোগাযোগ ও কৌশল কাজে লাগিয়ে আত্ম-প্রচারকারী ব্যক্তিরা অফিসে বড় কর্তাদের চোখে ভালো কর্মী হিসেবে বিবেচিত হন। শুধু তাই নয়, অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায়, যারা প্রকৃতই নিবিষ্ট চিত্তে কাজ করে যান তেমন কর্মীদের চেয়ে কিছুক্ষেত্রে আত্ম-প্রচারকারীরা এগিয়ে থাকেন।

'প্রোডাক্টিভিটি স্টাডি' বা কর্মোৎপাদন সক্ষমতা বিষয়ক এই গবেষণার আওতায় ছিল যুক্তরাজ্যের ২৮টি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। এই গবেষণা থেকে একদল কর্মীকে চিহ্নিত করা হয়েছে যাদেরকে দূর থেকে দেখলে মনে হয় যে, তারা 'হাইলি এনগেজড' বা তারা নিজের কাজে 'অতি গভীরভাবে সম্পৃক্ত'। কিন্তু নিবিড়ভাবে মনোযোগ দিলে বোঝা যায়, এসব ব্যক্তি আসলে 'সেল্ফ-প্রমোটার' বা 'আত্ম-প্রচারকারী' মাত্র। হাল্ট ইন্টারনেশনাল বিজনেস স্কুলের এই গবেষণায় টিম-ওয়ার্ক বা দলগত কাজে কর্মীদের সম্পৃক্ততার বিভিন্ন স্তর নিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছিলো।

এতে সাতটি ভিন্ন ভিন্ন ধরনের কর্মক্ষেত্রের কর্মীদের নমুনা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর মধ্যে স্বাস্থ্য, সরকার ও পরিবহন থেকে শুরু করে অলাভজনক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

কর্পোরেট সংস্কৃতি

গবেষণাটি বলছে, প্রতি ৫টি টিমের একটিতে এই ধরনের 'প্রহেলিকা' বা ধাঁধা পাওয়া গেছে। যেখানে দেখা গেছে কর্মীরা খুবই সম্পৃক্ত কিন্তু প্রকৃতার্থে তাদের উৎপাদশীলতা কম। এ ধরনের টিমগুলোর দিকে গবেষকেরা নিবিড়ভাবে লক্ষ্য করে দেখেছেন, এসব টিমের সদস্যরা আসলে যত বুলি দেন তত কাজ করেন না কিংবা তারা যত না কাজ করে তার চেয়ে বেশি আওয়াজ দেন। অর্থাৎ এই ধরনের ব্যক্তিরা মিটিংগুলোতে ঘড়ি ধরে উপস্থিত হয়, অফিসের কর্তাব্যক্তিদের সাথে আলাপে জড়িত হয় এবং তাদের কথা ও যুক্তিতে সায় দেয়। এসব করার মাধ্যমেই তারা কর্তাব্যক্তিদের চোখে পড়ে এবং কর্মক্ষেত্রে ভালো কাজের সুনাম পায় এবং এমনকি পদোন্নতিও পেয়ে যান। এ ধরনের ব্যক্তিদেরকে এই গবেষণায় 'সুডো-এনগেজড' বা কাজে গভীরভাবে সম্পৃক্ত হবার ভানধারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

কাজ না করেও পুরস্কার ও পদোন্নতি

'আত্ম-প্রচারকারী' ও অনেক কাজে ডুবে থাকার ভানধারী ব্যক্তিদেরকে এই গবেষণার জ্যেষ্ঠ গবেষক এমি আর্মস্ট্রং 'স্বার্থপর' বলে বর্ণনা করেছেন।

এমি আর্মস্ট্রংয়ের মতে এ ধরনের ব্যক্তিরা দলগত কাজকে অবমূল্যায়ন করে এবং দিন শেষে তারা আসলে কাজে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।