কুমিল্লা সদরের বিবির বাজার সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রশান্ত কুমার দাস (২৯) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। বিজিবির দাবি, প্রশান্ত একজন মাদক কারবারি ছিলেন।

গত বৃহস্পতিবার আটকের পর রাত তিনটায় মাদকবিরোধী অভিযানে কুমিল্লার বিবির বাজার বিওপির একটি বিশেষ টহলদল সীমান্ত পিলার ২০৮২ থেকে আনুমানিক তিন কিলোমিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সংরাইশ বেঁড়িবাঁধ নামক স্থানে মাদক কারবারি এবং বিজিবির গুলিবিনিময়ের ঘটনায় গুরুতর আহত হোন প্রশান্ত কুমার দাস। পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন প্রশান্ত।

বিজিবির ভাষ্যমতে, ওই স্থান তল্লাশী করে ২২০০ পিস ইয়াবা এবং ৩০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে।

এলাকাবাসী এবং প্রশান্তের পরিবারের দাবি, প্রশান্ত কুমার দাস একজন পেশাদার ভিডিওগ্রাফার ছিলেন।

কুমিল্লার মোগলটুলি এলাকার বাদল চন্দ্র দাসের ছেলে প্রশান্ত। গত মাসের ২২ তারিখ ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে প্রশান্তের মা মৃত্যুবরণ করেন।

প্রশান্তের পরিবারের দাবি, তিনি কখনোই মাদকের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। এমনকি তার নামে কোনো মামলাও নেই। এলাকার সবাই প্রশান্তকে ভিডিওগ্রাফার হিসেবেই জানেন। জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন প্রোগ্রামে ভিডিও করতেও দেখা গেছে তাকে।

নিহতের বড় ভাই রামু চন্দ্র দাস বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে নাজমুল নামের এক বন্ধু বাসা থেকে প্রশান্তকে দাওয়াত আছে বলে নিয়ে যায়। পরে আমরা জেনেছি তারা ২-৩ জন সীমান্তের লক্ষ্মীপুর ক্যাম্পের কাছে গেছে এবং সেখানে তাদের আটক করা হয়েছে। আমরা সাথে সাথে সেখানে যাই, দেখি ক্যাম্পে তাদের ছবি তোলা হচ্ছে। 

রামু বলেন, আমাদেরকে ক্যাম্পের ভেতরে যেতে দেয়নি। পরে ১০ বিজিবির গাড়ি এসে তাদেরকে কোটবাড়ি বিজিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। আমরা সেখানে যাই। বাইরে আমাদের মোবাইল নম্বর, নাম ঠিকানা রেখে আমাদেরকে ভেতরে যেতে দেয়নি। সেখানে আমরা একজনকে ২০ হাজার টাকা বিকাশ করি তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য।’

‘আমরা জানতে পারি বিজিবি একজনকে মেরে ফেলবে আর একজনকে ছেড়ে দেবে। আমরা রাত সাড়ে ১০টার দিকে আবার লক্ষ্মীপুর ক্যাম্পে এসে অপেক্ষা করতে থাকি। ওরা আমার ভাইকে মেরে ফেলে আর নাজমুলকে চালান দেয়। নাজমুল ইয়াবা ব্যবসা করতো। প্রশান্ত নিহত হওয়ার পর আমাদের ২০ হাজার টাকা আবার ফেরত পাঠানো হয়।" বলেন নিহত প্রশান্তের দাদা রামু চন্দ্র।

এই বন্দুকযুদ্ধ নিয়ে জনমনে ব্যাপক সন্দেহ এবং মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। পুরো বিষয়টির নিরপেক্ষ তদন্ত চায় স্থানীয়রা।

এ নিয়ে প্রশান্ত কুমার দাসের পরিবার প্রচণ্ড বিক্ষুব্ধ ও শোকাহত। 

রামু চন্দ্র বলেন, প্রশান্ত অন্যায়ভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। এই হত্যার পিছনে যারা দায়ী তাদের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।