অতি আন্তরিকতার খাতিরে অনেকেই বলেন, ‘তোমার জন্য আমার দরজা সব সময়ই খোলা।’ কিন্তু সত্যি সত্যিই যে দরজা সব সময় খুলে রাখবেন, এমন মানুষ বোধ হয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে ভারতের একটি শহুরে গ্রামের বাড়িগুলোর দরজা সত্যিই খোলা থাকে। শুধু খোলা থাকে বলছি কেন, আদতে দরজাই থাকে না সেসব বাড়ির!

ভারতের মহারাষ্ট্রের আহমেদনগর জেলার শনি শিংনাপুর এমনই একটি গ্রাম। যেখানে প্রতিবেশীদের জন্য তো বটেই, বাইরে থেকে আসা দর্শনার্থীদের জন্যও গ্রামবাসীর দরজা সব সময় খোলা থাকে। কিন্তু কেন বাড়িগুলো দরজাবিহীন?

কারণ খুঁজতে গেলে পাওয়া যায়, ৩০০ বছরের পুরোনো কিংবদন্তি। জনশ্রুতি আছে, সতেরো শতকের কোনো এক সময় কিছু রাখাল পাথরের একটি স্তম্ভ নদীতে ভেসে যেতে দেখে তা উদ্ধার করে। লাঠি দিয়ে পাথরটায় খোঁচা দিলে সেটা থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে শুরু করে, যা দেখার জন্য সারা গ্রামের লোক জমায়েত হয়। অতঃপর স্বপ্নে মন্দির নির্মাণের নির্দেশ পেয়ে সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয় শনির মন্দির। আরও কথিত আছে, স্বপ্নে শনি বলেছিলেন, এই গ্রামের লোকজন কখনো চুরি-ডাকাতির ভোগান্তিতে পড়বে না।

শনির ওপর গ্রামবাসীর বিশ্বাস এতই দৃঢ় যে তারা ঘরের দরজা তৈরি করার প্রয়োজন বোধ করে না। মন্দিরগুলো দর্শনের জন্য প্রতিদিন চল্লিশ হাজারের বেশি ভক্ত শনি শিংনাপুরে আসে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, শুধু বাসা নয়, শনি শিংনাপুরের কোনো দোকানেই তালা বা চাবি কিনতে পাওয়া যায় না। শুধু বাড়ি নয়, হোটেল, থানা, এমনকি ব্যাংকেও কোনো তালা নেই! অবশ্য ব্যাংকে টাকাপয়সার নিরাপত্তার জন্য রিমোট নিয়ন্ত্রিত তড়িৎ চৌম্বকীয় তালা ব্যবহার করা হচ্ছে। গ্রামবাসীর বিশ্বাস, দরজা বা তালা ব্যবহার করলে তা তাদের জন্য দুর্ভাগ্য বয়ে আনবে। আর অসৎ কেউ যদি চুরি করার চেষ্টাও করে, তবে সে প্রভু শনির শাস্তির হাত থেকে রেহাই পাবে না।

অবশ্য শুধু ঘরের দরজাই নয়, শহরে বসবাসরত চার হাজার মানুষের মনের দরজাও সব সময় খোলা থাকে প্রতিবেশী বা দর্শনার্থীদের জন্য। অভ্যাগতদের ভালোভাবে আপ্যায়ন করা তাদের পরম দায়িত্ব বলে মনে করে তারা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এমন হৃদ্যতাপূর্ণ জায়গা খুঁজে পাওয়া সত্যিই বিরল।

 

দর্পণ/দীপা